OrdinaryITPostAd

যৌন মিলনের পর পুরুষদের 'মৃত্যুর মতো' ঘুমের রহস্য – হরমোন, শক্তি ও মনস্তত্ত্বের ব্যাখ্যা

সহবাসের পর কেন আসে ‘মৃত্যুর মতো’ ঘুম? – The Science Behind Post-Sex Slumber

দিনের পর দিন একরকম ঘুম, তবু বিছানায় মিলনের পরের যে ঘুম—সে একেবারেই অদ্ভুত। নিজের সঙ্গীকে চিন্তা করে মনটা পেতে চাই, কিন্তু জোর করেও চোখ খোলা থাকে না। আমি নিজেও ভেবেছি: হয়তো এটা আমার শক্তির অভাব, নাকি প্রকৃতির কোন ষড়যন্ত্র? ফরাসিদের “La petite mort” বা “ছোট মৃত্যু” বলে ডাকা অভিজ্ঞতা কি এভাবেই হয়? আমরা সবাই বলতে শুনেছি, সেক্স মানেই আনন্দময় ক্লাইম্যাক্স – তবে ক্লাইম্যাক্সের পরে কেন এক মুহূর্তেই সব ভালো লাগা মরে যায়, আর ঘুম আসে?
Men 'feel like death' after sex
আমাদের মূল স্লোগানই বলে– “নিজে জানুন, অন্যকে জানান।” তো চলুন, ব্যক্তিগত গল্পের মতো করে এই প্রশ্নটোর পরতে পরতে বিচরণ করি। মনের আঙিনায় জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দিই: কি হলো আমার সাথে? …তখনই হৃদয়ের দরজায় ঠোকাঠুকি হচ্ছে ডোপামিন, অক্সিটোসিন, আর প্রোল্যাকটিনের। হ্যাঁ, যে প্রোল্যাকটিন আছে, সেও কারণের তালিকায় আছে! একদম সত্যি বলি: অর্গাজমের আগে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে, রক্তচাপ বাড়ে, আর চোখে আলো ঝলসে! কিন্তু পরক্ষণেই সবার মতো শরীর শিথিল হয়ে যায়। এই ঘটনা কি মানুষের শরীরের নাভিশ্বাস, নাকি প্রকৃতির খেলা?

আসলে ফরাসিদের “লা পেতিত মর্ট” শব্দগুচ্ছ (অর্থাৎ ‘ছোট মৃত্যু’) প্রকৃতপক্ষে অর্গাজমের পরের মুহূর্তগুলোকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। মানে, কিছুক্ষণের জন্য আমরা যেন জীবনকে সত্যিকারের বন্ধের মতো অনুভব করি। ইংরেজি ভাষার অভিধানও তাই নির্ধারণ করে– অর্গাজমকে ঘিরে যে ক্ষণিকের ‘চেতনা বা শক্তির হ্রাস’, সেটাই হচ্ছে ছোট মৃত্যু। কিন্তু কেন এতটা হ্রাস? সত্যি বলি, এ নিয়ে আমাদের অনেককে নিজেরাও ভনিতা লাগে। আমরা অবচেতনভাবে মনে করি, ‘আমার শরীর কি এত দুর্বল?’ না কই, আসলে এটা নাতিদূর ভবিষ্যৎ বিশ্বজয় করার মতো কিছু নয়, বরং দেহের নিজের তৈরি বিশ্রামের সংকেত

বিষয়ের গভীরে যেতে গেলে বুঝবেন হরমোন খেলাটাই আসল। মেলনের climax-এ যখন ডোপামিন আর অক্সিটোসিন ফুলে ফুলে বেরিয়ে আসে, তখনই আমাদের শরীর আনন্দে হইচই করে। তবে ঠিক পরেই শরীরে প্রোল্যাকটিন নামে অন্য একটি হরমোনের বিস্ফোরণ ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, অর্গাজমের পর প্রোল্যাকটিনের পরিমাণ উল্ল্বম্বর হয়, যা আমাদের অতিরিক্ত উত্তেজনা কমিয়ে দেয়। এক ধরনের ফিডব্যাক লুপ গড়ে ওঠে: ডোপামিনের আনন্দ থেমে যায়, আর বিকল্প হিসেবে আসে পরিতৃপ্তি ও শান্তি। আবার অক্সিটোসিন আছে, যাকে ‘bonding hormone’ বলে ডাকা হয়; এটি স্ট্রেসকে মুছে দেয় এবং শরীরের প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে। সব মিলিয়ে এই হরমোনিক ত্রিদল আপনার শরীরকে স্লিপ মোডে নিয়ে যায়। তাই আমরাও সঙ্গী অপেক্ষায় থাকে, আর মন বলে, “কি আর করা, দেহ চায় বিশ্রাম।”

হরমোনের খেলা: প্রোল্যাকটিন, ডোপামিন ও অক্সিটোসিন

“মনে হয় শরীরের সব শক্তি একদম চুরি হয়ে গেল!” – এই অভিজ্ঞতা কেন হয়, সেটার উত্তর ছাড়তে গেলে অবশ্যই হরমোনের জগতে হাত দিতে হবে। যৌন উত্তেজনার পিক পয়েন্টে আমাদের শরীর ডোপামিন নামে একটি উত্তেজনাকর নর্বিয়ার প্রবল ফ্লাড ছুড়তে শুরু করে। ডোপামিন আনন্দের রসায়ন; খাবার-সেক্সের পুরস্কার হিসেব আমাদের সজাগ রাখে। পাশাপাশি অক্সিটোসিন মুক্তি পায়, যা আমাদের কাছের কারুর সাথে একত্ববোধ বাড়ায়। এই দুটো একসাথে মিলে আমাদের মনে ‘বড়ো হইয়া গেলাম’ আর ‘ভালোবাসছি’—সে ধরনের অনুভূতি এনে দেয়।

কিন্তু এই আনন্দের পরে আসে প্রোল্যাকটিন। আসলে জিনিসটা এমন: অর্গাজমের সময় এবং পরবর্তীতে প্রোল্যাকটিন লেভেল খুব দ্রুত বেড়ে যায়। ব্রডির মতো গবেষকরা দেখিয়েছেন, অর্গাজমের পর প্রোল্যাকটিনের এই বুম ডোপামিনকে নিরুৎসাহিত করে। মানে, আগের স্বপ্নের সংসারে থাকা উচ্ছ্বাস হঠাৎ একনায় হয়ে যায়; শরীরে পৌঁছে যায় প্রশান্তি সংকেত। Men’s Health-এর ড. উইন্টার even বলে দিয়েছেন, “পুরুষ post-coital sleepy হওয়ার মূল কারণ প্রোল্যাকটিন, কারণ এটা ডোপামিনকে দুর্বল করে দেয় – ডোপামিন আপনার জেগে থাকতে সাহায্য করে।”

আরও মজার কথা, সেক্সই যখন বাতি বন্ধ করে বেডে হয়, তখন মেলাটোনিন নামের অন্য হরমোন শরীরে আসে যা ঘুমের চক্র শুরু করে। ফলে তিনটি হরমোন একত্রে – প্রোল্যাকটিন, অক্সিটোসিন, এবং মেলাটোনিন – মিলের পর আপনাকে এমন একটা ফাস্ট ঘুম দিতে পারে, যেন পৃথিবীটা মুহূর্তের জন্য থমকে গেছে।

তাছাড়া অর্গাজমের পর শরীরের পারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম সক্রিয় হয়ে যায়। এই সিস্টেম আমাদের কোন নিদ্রাহীন সময়কেও শান্ত করে দেয়, পেটে স্বস্তি দেয়। প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (মস্তিষ্কের যুক্তিতর্ক খণ্ড)ও ইতোমধ্যে শিথিল হয়ে গেছে – ফলে জেনে- বুঝে কিছু করার বুদ্ধি তখন থাকে না। সুকেলের কথায়, “অর্গাজমের পর মস্তিষ্ক সেরোটোনিন নামক হরমোনও ছুঁড়ে দেয়, যা ভালো মেজাজ এবং শিথিলতাকে উৎসাহ দেয়, আর মাঝে মাঝে ঘুম টানায়।”

সুতরাং এক কথায় বলতে গেলে: প্রোল্যাকটিন ডোপামিনের কনট্রোল নিয়ে নেয়, অক্সিটোসিন বন্ধন শক্ত করে, আর সেরোটোনিন+প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম জিনিসটা পুরোপুরি ধীর করে দেয়। এর ফলে আপনার দেহ নিজেই বলে দেয়, “ভাই, বিশ্রাম নেই!” আর মন বলে, “কি করি, শান্তি চাই।” তাই চোখ খোলা রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে আসে!

শারীরিক পরিশ্রম না, মনের খেলা: ক্যালোরি ব্যবস্থাপনা

অনেকে ভাবেন, হয়ত যৌন মিলন হচ্ছে একটি বিশাল ব্যায়াম, কাজেই ঘাম ঝরানোর পর দেহ ক্লান্ত। কিন্তু এর প্রকৃত পরিসংখ্যান শুনলে অবাক হবেন: গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গড়ে পুরুষ মাত্র ~১০১ ক্যালোরি (প্রায় ৪.২ ক্যাল/মিনিট) ক্ষয় করেন প্রতি সেশনেই। নারীদের জন্য তা আরও কম, ~৬৯ ক্যালোরি। এই হিসেব হল ২০-২৫ মিনিট মেলনের জন্য। অর্থাৎ অতিরিক্ত ভারি ব্যায়াম না হওয়ার পরেও মনে হয় হাজারো যুদ্ধ করেছি – কেন?

এখানে দরকার মাইন্ডট্রিক। সেক্সের সময় হার্টবিট দ্রুত হয়, শ্বাসপ্রশ্বাস বাড়ে, পেশি গড়গড় করে; এক ধরনের উত্তেজনা সর্বক্ষণে। তারপর পরবর্তী মুহূর্তে এই সব হঠাৎ চমকে কমে যায়। আপনার শরীরের রক্তচাপ-হার্ট রেট জাম্প করে জম্পেশ, আর রিলিজের পর হঠাৎ করে ‘রিলাক্স মোড’। এই রিকারেন্ট ঢালাই জিগজ্যাগই চোখ অনেকটা মেলে নেই। সহজভাবে বললে, মন বোঝে আপনাকে আরেকবার এমন নাড়ি-ঠাণ্ডা না দিতে – তাই জোর করে ঘুমানো লাগার কথা বলে বসে।

তো আসলে আপনি ক্লান্ত নন, বরং মস্তিষ্ক আপনাকে চতুরায়িত করছে! প্রকৃতির নিয়মেই (বা প্রাণীজগতের বুদ্ধিতে) মিলনের পর সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ড না করার নোটিশ মস্তিষ্ক দিয়ে দেয়। প্রভুরা গিয়েছিলেন, ঘৃণা গিয়েছিলেন বলে নয়, পুরো প্রাণীজগতের ইনস্টিংক্ট এমনই কাজ করে। আর কেউ আপনাকে বললে বিশ্বাস করবেন না, ক্যালোরির হিসেব মোটেও বিপুল নয় – ১০০-১৫০ ক্যালোরির দুঃস্বপ্ন শুধু মিথই!

সব মিলিয়ে বিশ্লেষণ করলে, মিলন পরের ক্লান্তি মানে আপনার স্পায়ারিয়াল ক্যালোরির অভাব নয়, বরং হরমোনাল এবং স্নায়বিক পরিসর আপনার শরীরকে অসচেতন পথে “ঘুম” এ পাঠিয়ে দেয়।

মিথ ও বাস্তবতা: অতিরিক্ত মিলন আর স্বাস্থ্য

সমাজে প্রচলিত একটা গুমরাহি আছে: “অতিরিক্ত মিলন করলে শরীর নষ্ট হয়ে যাবে, হাড়ের মজ্জা শুকিয়ে যাবে।” আসলে এটি মিথের মরিচিকা ছাড়া কিছুই না। বিজ্ঞান বলে, পরিমিত (সাপ্তাহিক ১-২ বার) যৌন মিলন ইমিউন সিস্টেমকে মজবুত করে; অর্থাৎ রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক মনস্তত্ত্ব গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত (সপ্তাহে ১-২ বার) মিলনের ফলে স্লাইভারি IgA নামের রোগ-প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির মাত্রা অন্যদের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সহজ করে বললে, মাঝারী মাত্রার সেক্স করলে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া লড়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়।

অতিরিক্ত মিলনের কথা উঠলেও, আবার কিছু প্রমাণও দেখিয়েছে সপ্তাহে ৩ বার বা তার বেশি সেক্স করা লোকদের তুলনায় কম সেক্স করা লোকদের মাঝে সর্দি-কাশি, করোনা ইত্যাদির ঘটনা কিছুটা বেশি। এই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাসে ৩ থেকে ৪ বার মিলন করেন তাদের কোভিড সংক্রমণের হার প্রায় অর্ধেক (৫০%) হিসাবে ছিল। আর যারা মাসে ১-২ বার করেন, তাদের গায়ে করোনা বাসা বেঁধেছিল অনেক বেশি। বলা যায়, নিয়মিত মিলন শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক আনন্দ উভয়কেই ফিড করে – দুর্বলতার অজুহাত নয়।

অতএব পুরোনো প্রবাদটি একদম বাস্তব নয় – আসলে পরিমিত মিলন শরীরের মজ্জাকে ক্ষয় করে না, বরং মন-দেহের উদ্দীপনা ধরে রাখে। কিন্তু অবশ্যই অতিরিক্ত এবং বাধ্যতামূলক মিলন কোনও ভালো বিষয় নয়; ওষুধের মতো যা কিছু বেশি হোক ক্ষতি তো আছেই। বারংবার প্রচণ্ড উত্তেজনা ডোপামিনকে হাইপ করে, তাতে ব্রেনের অনুভূতিগুলো ঢাকতে পারে। তখন সেক্স আর আনন্দ নয়, অন্য একটি নেশার মতো হয়ে যায় – এবং যেকোনো নেশার ফলাফলই প্রায় একটাই: সর্বশেষ ক্লান্তি।

আবেগ ও সম্পর্ক: post-sex অভিব্যক্তি

বস্তুর অবস্থায় বড় সমস্যার কারণ কি? মিলনের পর কিছু পুরুষের দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার যে প্রবণতা, অনেক মনোবিজ্ঞানী সেটাকেই একধরনের ‘পলায়ন’ বলে দেখেন। কেন? যৌন মিলনের পর যে ঘনিষ্ঠ, আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়, অনেক পুরুষ সেটাকে হ্যান্ডেল করতে ভয় পান বা কষ্ট অনুভব করেন। উজ্জ্বল ঘুম মানে হচ্ছে সব কিছু ঠিক ছেড়ে দেওয়া – শব্দ নিষিদ্ধ, কথা শেষ। অনেক পুরুষ subconsciously সেই মুহূর্ত থেকে “ঘুমের দেশে” পালিয়ে যান।

প্রবণতা হিসেবে দেখা গেছে, যে ব্যক্তি সঙ্গীর সাথে post-coital pillow talk (ফিরে ফিরে কথা-বাতাস) করতে চায়, তার শরীরে অক্সিটোসিনের স্তর বেশি থাকে, আর যে ব্যক্তি এড়িয়ে যায়, তার টেস্টোস্টেরন বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ টেস্টোস্টেরন যুক্ত পুরুষদের মধ্যে মিলনের পর এতটাই আবেগ প্রবণতা কম থাকে যে তারা পোস্ট-সেক্স কথা বলতে নিরাপদ মনে করে না। সহজ করে বললে, কেউ কেউ সেক্সের পরে কী অনুভব করতে পারে বা কী বলা উচিত – সেটাই হয়তো তাদের কৌতূহল বা সায় না। হাই টেসটোস্টেরন থাকলে দেখেছেন, তারা post-sex কথোপকথনে আগ্রহী হয় না, বরং এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। এলোনক গবেষণায় বলা হয়, যাঁরা প্রথমেই ঘুমিয়ে পড়েন, তাদের সঙ্গী প্রকৃতপক্ষে আরও বন্ডিং চান (মাহোল চায়)।

যাই হোক, পরিশেষে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে – আপনার জন্য আদৌ অপরিহার্য শুধু আপনার স্বাস্থ্যবিদ্যা রক্ষণ, নাকি সঙ্গীর আবেগের খাতিরেও কিছু ভাবা উচিত? অনেকসময় মনে হয় “আমি ক্লান্ত” বলে সঙ্গীকে বঞ্চিত করা সহজ অবলীলায়; কিন্তু হারানো যে শুধু সাময়িক আনন্দের বিষয় নয়, সম্পর্ক-গোঁড়াতেই ফোঁটা কিছু চিরস্থায়ী সাবধানতা।

কী করবেন?

  • কথা বলুন: সত্যি বলতে কি মিলনের পরে সামান্য গপ্প-গল্পও সম্পর্কের জন্য যেমন তাজা বাতাস, তেমনি দুইজনের বন্ধন-বন্ধনকেও শক্ত করে। অনেক অধ্যান বলে, পোস্ট-সেক্স আলাপ আপনাদের সংযোগ বাড়ায়, সঙ্গতই রিলেশনের স্যাটিসফেকশনও।
  • হলুদ আলো জাগ্রত রাখুন: শুধু অনচেনা গাঢ় ঘুম নয়, স্মরণ রাখুন, প্রাকৃতিক জাগতিক নির্দেশনা মনে করিয়ে দেয় বাইরে আলো থাকলেই দেহ বলতে পারে, “এখনো না ঘুমাব”। তাই মাঝে মাঝে স্ক্রিন/লাইট জ্বালানো রাখুন।
  • স্নায়ুতন্ত্রকে ঠান্ডা দিন: ইমোশন বা ক্লান্তি এড়াতে ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন, মাথায় চাপ বাড়াবেন না। মৃদু আলতো আলতো কথোপকথন, হালকা নরম মিউজিক, কিছুক্ষণ সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে থাকা – এসব আপনাকে কথা বলার সুযোগ দেবে।
  • সময় দিন: মিলনের পরে একেবারে সঙ্গীকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় পড়ে না থেকে, অন্তত ৫-১০ মিনিট একটু বসে কথা বললেই অনেক কথা পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে।
আমাদের ব্লগের নীতিই বলে – “নিজে জানুন, অন্যকে জানান।” তাই এই বিষয়েও নিজেরা জানুন, এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সবার সঙ্গে শেয়ার করুন। আপনার শরীর হয়তো হরমোনের খেলায় ক্লান্ত, কিন্তু আপনার মন এখনো জাগ্রত: তাই সিদ্ধান্তটা নিজের হাতে।

শেষ কথা

আপনি কি একেবারেই একা? নিশ্চয় না। লাখো পুরুষই এ প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রান্ত – যৌন মিলন পরের ক্লান্তি কি নিজের অবসাদের কারণ, নাকি আমাদের শরীরের চাওয়া শান্তির প্রতিফলন? উত্তরটি মেলবন্ধনেই: হরমোন, ব্যায়াম-ক্যালোরি আর মানসিকতা– এ তিনের মেলবন্ধনেই এ রহস্য লুকানো। মস্তিষ্ক আপনাকে স্বাভাবিক রাখতে চাইছে, যেন দুয়ার বন্ধ করে ঘুমানো নয়, বরং সতর্ক থাকতে পারেন।

জীববিজ্ঞানের দৃশ্যপটে দেখলে, অর্গাজম স্রেফ একটু উচ্চসংক্রিয় মুহূর্ত আর পরের পালা একটা গভীর নির্জীব বিরাম। পেশির গতি, রক্তচাপ, হার্টবিট সব ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে পরবর্তী মুহূর্তে অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। এটাই সাম্প্রতিক গবেষণার দেওয়া ছবি। তবে সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে এই উপলব্ধির নিরাপত্তা হাতছাড়া করেন না – আসলে যারা চোখের সামনে নিজের আনন্দে হারিয়ে যায়, তারা অনেকে সঙ্গীর আবেগ ফেলার নিশ্চিন্ত এড়ানোর লক্ষণও হতে পারে।

এখন নিজেকে প্রশ্ন করুন – আপনি কি শুধুই নিজের জন্য বিছানায় যাচ্ছেন, নাকি সঙ্গীকে সেই পূর্ণ আনন্দ দেবার চেষ্টা করছেন, যাকে ঘুমের চাইতেও বড় একটা আশীর্বাদ বলা যায়? আপনি যদি সবচেয়ে প্রিয় মানুষের হাতটাকে একটু বাঁধতে পারেন, চোখে চোখ রেখে একটু কথা বলতে পারেন, তবে হয়তো আপনার প্রকৃত শক্তি ফিরে পেতে পারেন। কারণ দুইজন মিলে যে আনন্দ বিলিয়ে দেয়, তার গভীরতা কেউ রাতের ঘুমের ছায়ায় মাপতে পারে না।
প্রকৃতি হয়তো আমাদের মস্তিষ্ককে ‘বিশ্রাম দিন’ বলছে, কিন্তু আমাদের হৃদয় তো এখনও জেগে আছে – তাই দিই এই রহস্যের এক আমন্ত্রণ, আর উত্তরে নিজেকে জাগরিত রাখার চ্যালেঞ্জ। আপনারা কী ভাবছেন? কেমন হলো আপনার অভিজ্ঞতা?

কল টু অ্যাকশন (CTA)

এই লেখাটি পড়ে আপনার কী মনে হয়েছে? যদি ভালো লেগে থাকে, আপনার মতামত শেয়ার করুন – হয়তো আমাদের পরবর্তী আলোচনায় আপনিও নতুন কিছু যোগ করতে পারবেন। সম্পর্ক এবং যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের আরও অনেক তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক টিপসের জন্য ভিজিট করুন www.kaziariful.com এবং “নিজে জানুন, অন্যকে জানান”—এই স্লোগানকে মেনে, নতুন জ্ঞান ছড়িয়ে দিন। কমেন্টে আপনার গল্প বা প্রশ্ন লিখুন, শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে। নিরাপদ থাকুন এবং সচেতন থাকুন!

FAQ (প্রশ্নোত্তর)

প্রশ্ন: যৌন মিলনের পর পুরুষ কেন এত দ্রুত ক্লান্ত বা ঘুমিয়ে পড়ে?

  • উত্তর: শরীরের হরমোন পরিবর্তন এর প্রধান কারণ। অর্গাজমের পর প্রোল্যাকটিন লেভেল বেড়ে যায় যা ডোপামিন (সক্রিয়তার হরমোন)কে কমিয়ে দেয়। একই সঙ্গে অক্সিটোসিন ও সেরোটোনিন বেড়ে যায়, যা শরীরকে শান্ত করে এবং ঘুমের ইঙ্গিত দেয়। সহজ করে বললে, শরীর নিজেই বলে “এবার বিশ্রাম নাও”।

প্রশ্ন: মেলনের সময় কি আসলেই ১০০-১৫০ ক্যালরি খরচ হয়?

  • উত্তর: গবেষণায় দেখা গেছে গড়ে পুরুষের জন্য একটা যৌন মিলনে প্রায় ১০১ ক্যালরি পোড়ে। নারীদের জন্য তা ~৬৯ ক্যালরি। অনেকেই “১০০-৩০০ ক্যালরি” কথা বলেন, কিন্তু সেটা একটি প্রচলিত মিথ; সেদিক দিয়ে কোনও সাপেক্ষ বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই। সামগ্রিকভাৱে মিলন একটা হালকা-মধ্যম ধরনের ব্যায়াম, তাই শারীরিক ক্লান্তি বেশি হলে সেটা অন্য কারণও হতে পারে।

প্রশ্ন: অতিরিক্ত সেক্স কি শরীরের জন্য ক্ষতিকর?

  • উত্তর: পরিমিত যৌনতা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে মাঝে মাঝে মিলনে ইমিউনিটি বাড়ে। কিন্তু যত্ন নেওয়া জরুরি – অতিরিক্ত সেক্স মানসিকভাবে চাপ বা শারীরিক ক্লান্তি বাড়াতে পারে। যেকোন নেশার মতো অতিরিক্ত সেক্সে ডোপামিনের ভারসাম্য গড়बড় হয়, তখন তাও অবসাদই দেওয়া ফলাফল। সংক্ষেপে, সুষম মেজাজ ও শরীরমন্দা থাকার জন্য পরিমিততা ভালো

প্রশ্ন: কেন অনেক পুরুষ মিলনের পর কথা বলতে পছন্দ করে না?

  • উত্তর: এর পেছনে আছে মানসিক এবং হরমোনাল কারণ। কারো ক্ষেত্রে উচ্চ টেস্টোস্টেরন থিংকিং চলে এবং তারা পোস্ট-সেক্স ইমোশনাল কথোপকথনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। অন্যদিকে কারো শরীরে অক্সিটোসিন বেশি থাকলে তারা cuddling বা কথা বলতে চায়। পুরুষরা ক্লান্তি বা ঘুমকে excuse হিসেবেও ব্যবহার করে, অথচ প্রকৃত কারণ হতে পারে মানসিক vulnerability এড়ানো।

প্রশ্ন: ডোপামিন-প্রোল্যাকটিনের গেম কি আরেকবার সেক্স নিয়ে ফেরার জন্য?

  • উত্তর: হ্যাঁ, একদম! প্রকৃতিতে মিলনের পর আপনাকে চুপচাপ থাকার জন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই—আপনাকে পুনরায় মিলনের জন্য প্রণোদিত করাই প্রকৃতির চতুর পরিকল্পনা। সুতরাং দ্বিতীয়বারের পারফরম্যান্স না হওয়াটা বেশি ক্লান্তির ফল নয়, বরং শরীরের স্বাভাবিক বিচক্ষণতা। ইদানীং গবেষণা বলছে, মিলন আসলে আমাদের species-কে টিকিয়ে রাখতে একটা reward ব্যবস্থা; দুটো শব্দে বললে – “জীবিত থাকার প্রলোভন”।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url