OrdinaryITPostAd

AI কি লেখকের কাজ কেড়ে নিচ্ছে? আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা | নিজে জানুন অন্যকে জানান

লেখকদের কাজ কি AI কেড়ে নিচ্ছে? একজন লেখকের চোখে বাস্তব অভিজ্ঞতা | নিজে জানুন, অন্যকে জানান


সেদিন সকালে ফোন খুলতেই চোখে পড়ল এক বন্ধুর মেসেজ(Inbox): “ভাই, AI এখন ব্লগ থেকে বই—সবই লিখে দিচ্ছে! তাহলে আমরা লেখকরা কী করব?”
এআই কি লেখকের কাজ কেড়ে নিচ্ছে?
প্রশ্নটি নতুন নয়, তবে এর মধ্যে যে উদ্বেগ—সেটা নতুন।
আমি একজন লেখক। কীবোর্ডটাই আমার কলম। রাত জেগে, ভোরের আলো ফোটার আগে, কফি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পরও—লেখাটাই আমার জীবন।

আর তখনই হাজির AI। ChatGPT, Gemini, Copilot… যেন সায়েন্স ফিকশনের চরিত্ররা বাস্তবে নেমে এসেছে। এক ক্লিকে আর্টিকেল, এক প্রম্পটে হাজার শব্দ।

স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগল—
  • 👉 AI কি আমার কাজটা কেড়ে নেবে?

  • 👉 আমি কি অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছি?

  • 👉 লেখালেখি কি এখন obsolete?

  • 👉 AI কি আমার পেশাটাই কেড়ে নেবে?

  • 👉 লেখালেখি কি এখন অপ্রয়োজনীয়?

কিন্তু ভয় সব সময় সত্যি বলে না।
ভয় অনেক সময় নতুন দরজা খুলে দেয়।

আমি নিজে AI ব্যবহার করেছি, ভুল করেছি, শিখেছি।
এই লেখায় কোনো তত্ত্বকথা নয়—আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
একটি সাধারণ লেখকের চোখে AI আসলে কী: শত্রু নাকি সহযাত্রী?

আমাদের নীতিই হলো—নিজে জানুন, অন্যকে জানান।
তাই এই গল্পটি সবার সাথে ভাগ করে নিচ্ছি।

চলুন, শুরু করা যাক।

AI-এর আগমন: লেখালেখির জগতে কী বদলাল?

পূর্বে একটি ১০০০ শব্দের আর্টিকেল লিখতে সময় লাগত ৪–৫ ঘণ্টা। রিসার্চ, আউটলাইন, পুনলিখন, সম্পাদনা—সব নিজের হাতে।

আজ? AI-এর সাহায্যে ড্রাফ্ট তৈরি হয় ১০ মিনিটে।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই—উৎপাদনশীলতা (Productivity)  বেড়েছে।

কিন্তু সমস্যা হলো, অধিকাংশ AI-লেখা একই রকম শোনায়।
সমতল, প্রাণহীন।

গুগলও বিষয়টি বুঝেছে।
তাদের EEAT (অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, কর্তৃত্ব, বিশ্বস্ততা) আপডেট গুরুত্ব দেয় মানুষের অভিজ্ঞতা-কে।
আর AI-এর তা নেই।

আমার প্রথম AI-সংযোগ: কৌতূহল থেকে যাত্রা

আমি প্রথম AI ব্যবহার করেছিলাম কৌতূহলবশত। 
একটি প্রম্পট দিলাম, ফল পেলাম।

লেখাটি ঠিকই ছিল—কিন্তু কিছু একটা অনুপস্থিত ছিল।
আমার গল্প, আমার ভুল, আমার সংগ্রাম—সেখানে ছিল না।

আমি বুঝলাম, AI লিখতে পারে, কিন্তু অনুভব করতে পারে না।
সেই দিনই আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেল।

AI বনাম লেখক: যুদ্ধ নাকি সহযোগিতা?

অনেকেই এটাকে যুদ্ধ হিসেবে দেখেন।
আমার মতে, এটা সহযোগিতা।

AI হলো ক্যালকুলেটর, লেখক হলো গণিতবিদ।
ক্যালকুলেটর গণিতবিদকে অপ্রয়োজনীয় করে না—বরং শক্তিশালী করে।

আমি এখন যেভাবে কাজ করি

  • গবেষণা → AI
  • রূপরেখা → AI + আমি
  • খসড়া → আমি
  • আবেগ ও ব্যক্তিক ছোঁয়া → শুধু আমি

যেখানে AI সত্যিই দারুণ

  • কীওয়ার্ড গবেষণা
  • শিরোনাম আইডিয়া
  • ব্যাকরণ ও বানান সংশোধন
  • কনটেন্ট পুনর্বিন্যাস
  • সময় সাশ্রয়

যেখানে AI এখনও দুর্বল

  • ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
  • আবেগের গভীরতা
  • সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতা
  • রসবোধ
  • নৈতিক বিচার
এই ক্ষেত্রগুলোতেই একজন মানুষের কণ্ঠস্বর আলাদা।

গুগল আপডেট ও AI কনটেন্ট: বাস্তবতা কী?

গুগল স্পষ্ট বলে দিয়েছে—
AI-তে তৈরি কনটেন্ট নিষিদ্ধ নয়, নিম্নমানের কনটেন্ট নিষিদ্ধ।

অর্থাৎ, কনটেন্ট যদি মানবিক ও মূল্যবান হয়—তা AI-তে তৈরি হলেও র‍্যাঙ্ক করবে।
লক্ষ্য হবে মানুষের জন্য মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করা।

লেখকদের জন্য নতুন সুযোগ

AI আসার পর নতুন ভূমিকাও তৈরি হয়েছে:
  • প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার (Prompt Engineer)
  • AI কনটেন্ট সম্পাদক (AI Content Editor)
  • মানবিক কনটেন্ট লেখক (Humanized Content Writer)
  • তথ্য যাচাইকারী (Fact Checker)
  • কনটেন্ট কৌশলবিদ (Content Strategist)
লেখকরা হারাচ্ছেন না—রূপান্তরিত বা Transform হচ্ছেন।

ভয়ের আসল রূপ: আমরা কি আসলে AI-কে ভয় পাই?

সত্যি কথা বলতে,
আমরা AI-কে ভয় পাই না—
আমরা পরিবর্তন, পুনর্শিক্ষণ এবং নতুন করে শুরু করতে ভয় পাই।

ইতিহাস সাক্ষী, যারা পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়েছে—তারাই টিকে আছে।

ব্যবহারিক পরামর্শ: লেখকরা AI কীভাবে ব্যবহার করবেন

  • AI-কে সহকারী (assistant) বানান, কর্তা বা (boss) নয়
  • প্রতিটি লেখায় নিজের অভিজ্ঞতা যুক্ত করুন
  • AI-এর ডিরেক্ট আউটপুট পাবলিশ করবেন না
  • তথ্য যাচাই করুন
  • আপনার নিজস্ব স্টাইল বজায় রাখুন

শেষকথা

প্রশ্নে ফিরে যাই—AI কি লেখকের কাজ কেড়ে নিচ্ছে?

আমার উত্তর: না।
তবে যে লেখক শুধু যান্ত্রিকভাবে শব্দ জুড়ে যান, তার কাজ ঝুঁকিতে আছে।

AI আমাদের জন্য একটি আয়না—
যা প্রশ্ন করছে: “তুমি কি সত্যিই মান (value) যোগ করছ?”

যদি আপনি কেবল তথ্য সাজান, AI সেটা দ্রুত করবে।
কিন্তু যদি আপনি
গল্প বলুন,
অনুভব করুন,
সংগ্রাম করুন—
তবে আপনাকে প্রতিস্থাপন করা অসম্ভব।

আমি আজও লিখি, আগের চেয়ে বেশি সচেতন হয়ে।
AI আমার কলম নয়—একটি কার্যকরী সরঞ্জাম মাত্র।

আমাদের ব্লগের উদ্দেশ্যের মতোই—
নিজে জানুন, অন্যকে জানান।
এই লেখা যদি একজন লেখকেরও ভয় দূর করে, সাহস জোগায়—তবেই সার্থক।

ভবিষ্যৎ ভয়ংকর নয়, বরং বুদ্ধিদীপ্ত।
আর মানুষ? মানুষ চিরকালই প্রয়োজনীয়।

Call To Action

আপনিও কি লেখক, ব্লগার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর?
AI নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী?
  • 👇 মন্তব্যে জানান
  • 🔁 এই লেখাটি শেয়ার করুন অন্য লেখকদের সাথে
  • 📌 আমাদের ব্লগে নিয়মিত আসুন—নতুন জ্ঞান শেয়ার করতে

FAQ

Q1: AI কি ভবিষ্যতে সব লেখকের কাজ নিয়ে নেবে?

  • না। AI একটি সরঞ্জাম, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও দায়িত্ব মানুষের হাতেই থাকবে।

Q2: AI-তে লেখা কনটেন্ট কি গুগলে র‍্যাঙ্ক করবে?

  • হ্যাঁ, যদি তা মানবিক, প্রাসঙ্গিক ও মূল্যবান হয়।

Q3: নতুন লেখকদের কি AI নিয়ে ভয় পাওয়া উচিত?

  • ভয় না, বরং AI-কে কাজে লাগানোর দক্ষতা বাড়ানো উচিত।

Q4: AI ব্যবহার করলে কি প্লেজিয়ারিজম হয়?

  • সরাসরি কপি করলে হয়। সম্পাদনা ও নিজস্বতা যোগ করলে নয়।

Q5: এখন লেখকদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা কী?

  • সমালোচনামূলক চিন্তা, গল্প বলার ক্ষমতা এবং মানবিক সংযোগ তৈরি করা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url