বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ফিটনেসবিহীন গাড়ি। যেসব যানবাহনের ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে, সেগুলো সড়কে চলাচল করলে তা শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায় না, পরিবেশ দূষণও বৃদ্ধি করে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত হলো—ফিটনেসবিহীন গাড়িকে আর সড়কে চলতে দেওয়া হবে না। সম্প্রতি সরকারের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ঘোষণা দিয়েছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ডাম্পিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ইতিমধ্যেই একাধিক অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। অভিযানে মামলা দায়ের, জরিমানা আদায়, কারাদণ্ড প্রদান থেকে শুরু করে ডাম্পিং পর্যন্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্যমতে ৮০টিরও বেশি গাড়ি ইতিমধ্যে ডাম্প করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হচ্ছে—সরকার আইন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

তবে এ প্রক্রিয়ায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাপও রয়েছে। তারা দাবি করছে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি হঠাৎ সরালে মালিক ও চালকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর ফলে সরকার ও মালিক-শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে আলোচনার দরজা খুলেছে। উপদেষ্টা জানিয়েছেন, যদি পরিবহন মালিকদের যথাযথ সময় ও সুযোগ দেওয়া যায়, তবে ধাপে ধাপে ডাম্পিং কার্যক্রম চলবে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো সড়ককে নিরাপদ করা, দূষণ কমানো এবং জনসাধারণকে একটি শৃঙ্খলিত পরিবহন ব্যবস্থার সুবিধা দেওয়া। সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস, যানজট নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ির ডাম্পিং এখন সময়ের দাবি।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির ডাম্পিং ও সড়ক নিরাপত্তা
প্রেক্ষাপট
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন যে, ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি সড়কে চলতে দেওয়া হবে না (
kalerkantho.com)।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) অভিযান শুরু হয়েছে এবং নিয়ম ভঙ্গকারী যানবাহনগুলোকে ডাম্পিং করা হচ্ছে (Bangladesh Journal Online)।
বর্তমান অবস্থা
বিআরটিএ’র চালানো ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গত মাসে প্রায় ৩৬৭টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। যেখানে ২,৮২৪টি মামলা দায়ের, ১২ জনকে কারাদণ্ড এবং
৮৪টি গাড়ি ডাম্পিং করা হয়েছে; পাশাপাশি মোট ৭১ লাখ টাকায় বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে (
Bangladesh Journal Online)।
মালিক-শ্রমিক ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারি এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের হুমকি দেয়। তবে উপদেষ্টার নেতৃত্বে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়; এবং আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সংশোধনী নিয়ে আইন প্রণয়ের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় (Bangladesh Journal Online)।
চ্যালেঞ্জ ও ব্যাপ্তি
সরকার ইতিমধ্যেই ডাম্পিং কার্যক্রম শুরু করলেও মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়ায় নীতিগত ও বাস্তব প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন—
যদি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মালিকদের সময় ও সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে (
Bangladesh Journal Online)।
সারসংক্ষেপ
-
ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি অবিলম্বে সড়ক থেকে সরানোর জন্য সরকার বিআরটিএ অভিযান চালাচ্ছে।
-
ডাম্পিং বাড়ছে—সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৮৪টি গাড়ি ডাম্প করা হয়েছে।
-
মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটের হুমকি ও আলোচনার পর, সরকার সময় ও সহায়ক পরিবেশ দিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আগ্রহী।
-
পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে আইন সংশোধন ও নিয়মাবলী প্রণয়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
শেষকথা
ফাওজুল কবির খান নির্দেশনার মাধ্যমে একটি সুসংগঠিত ও সুরক্ষিত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হতে চাচ্ছে সরকার। ফিটনেসবিহীন যানবাহন সরিয়ে রাজধানী ও দেশের সড়কগুলো থেকে বিপদমুক্ত, দ্রুত ও নিয়মস্মত চলাচলের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ডাম্পিং অভিযান, আইন সংস্কার ও ডায়ালগ ভিত্তিক প্রয়োগ—তিনটি স্তরে এগোচ্ছে। এই ব্যবস্থায় প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো মালিক-শ্রমিক সংগঠনের অংশগ্রহণ এবং প্রভাবকে সামাল দেওয়া, যাতে কার্যক্রমে স্থায়িত্ব আসে এবং সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।
FAQ
প্রশ্ন ১: ফিটনেসবিহীন গাড়ি কী?
উত্তর: যেসব গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট মেয়াদোত্তীর্ণ বা অনুপস্থিত, এবং যেগুলো চালানোর মতো উপযুক্ত নয়, সেগুলো ফিটনেসবিহীন গাড়ি।
প্রশ্ন ২: ফিটনেসবিহীন গাড়ি কেন বিপজ্জনক?
উত্তর: এগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়, দূষণ সৃষ্টি করে এবং সড়ক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।
প্রশ্ন ৩: ডাম্পিং মানে কী?
উত্তর: ডাম্পিং হলো এমন প্রক্রিয়া যেখানে আইন ভঙ্গকারী গাড়িকে সড়ক থেকে সরিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে জব্দ করে রাখা হয়।
প্রশ্ন ৪: বিআরটিএ এ পর্যন্ত কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
উত্তর: সাম্প্রতিক অভিযানে হাজারো মামলা, লাখো টাকার জরিমানা, কারাদণ্ড এবং ৮০টির বেশি গাড়ি ডাম্প করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৫: মালিক-শ্রমিক সংগঠন কী অবস্থানে আছে?
উত্তর: তারা হঠাৎ করে ডাম্পিংয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তবে সরকারের সাথে আলোচনার পর ধাপে ধাপে বাস্তবায়নে তারা কিছুটা নরম অবস্থান নিয়েছে।
অফিসিয়াল ও নির্ভরযোগ্য সূত্র (Sources)
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url