OrdinaryITPostAd

প্রতিদিনের যিকির - যে ১২টি দু'আ ও তাসবীহ আপনার জীবন বদলে দেবে !

আমরা মুসলিমরা জানি, আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা (যিকির) আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়শই যিকির থেকে দূরে সরে যাই, অথচ এই ছোট ছোট আমলগুলোই পারে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য এনে দিতে। আজ আমরা এমন ১২টি গুরুত্বপূর্ণ দু'আ ও তাসবীহ নিয়ে আলোচনা করব, যা আমরা প্রতিদিনই পড়তে পারি। প্রতিটি যিকিরের গুরুত্ব আমরা সহীহ হাদীসের আলোকে তুলে ধরব, যাতে এর ফজিলত সম্পর্কে আপনার জ্ঞান আরও বাড়ে এবং আমল করার প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
আমরা মুসলিমরা জানি, আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা (যিকির) আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়শই যিকির থেকে দূরে সরে যাই, অথচ এই ছোট ছোট আমলগুলোই পারে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য এনে দিতে। আজ

১. "সুবহানাল্লাহ" (سبحان الله) - আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা

অর্থ: আল্লাহ পবিত্র।

ফজিলত: এই যিকিরটি আল্লাহর মহত্ত্ব ও পবিত্রতা ঘোষণা করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "দুটি বাক্য রয়েছে যা মুখে হালকা, পাল্লায় ভারী এবং রহমানের নিকট প্রিয়: 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম' (আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি)।" (সহীহ বুখারী, মুসলিম)
কেন পড়বেন: এটি আল্লাহর প্রতি আপনার প্রশংসা ও আনুগত্যের প্রকাশ। পাপ মোচনের জন্যও এটি অত্যন্ত কার্যকর।

২. "আলহামদুলিল্লাহ" (الحمد لله) - আল্লাহর প্রশংসা

অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

ফজিলত: আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের শ্রেষ্ঠ উপায় এটি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। 'আলহামদুলিল্লাহ' পাল্লাকে পূর্ণ করে দেবে..." (সহীহ মুসলিম)। অন্য হাদীসে এসেছে, জান্নাতিরা আল্লাহর প্রশংসা করবে।
কেন পড়বেন: প্রতিটি ভালো ও মন্দের পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রশংসা করে আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, যা আরও বরকত নিয়ে আসে।

৩. "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" (لا إله إلا الله) - একত্ববাদের ঘোষণা

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।

ফজিলত: এটি ইসলামের মূল ভিত্তি, তাওহীদের ঘোষণা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। এটি সকল যিকিরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
কেন পড়বেন: এটি অন্তরে আল্লাহর একত্ববাদের অনুভূতিকে দৃঢ় করে এবং সকল শিরক থেকে মুক্ত রাখে।

৪. "আল্লাহু আকবার" (الله أكبر) - আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা

অর্থ: আল্লাহ মহান।

ফজিলত: এটি আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও পরাক্রমশালিতা ঘোষণা করে। নামাজের শুরুতেই আমরা এই তাকবীর বলি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার বলা আমার কাছে পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার চেয়েও বেশি প্রিয়।" (সহীহ মুসলিম)।
কেন পড়বেন: আল্লাহর মহত্ত্ব স্মরণ করে আমরা নিজেদের বিনয়ী করতে পারি এবং তার প্রতি আত্মসমর্পণ করতে পারি।

৫. "আস্তাগফিরুল্লাহ" (استغفر الله) - ক্ষমা প্রার্থনা

অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি।

ফজিলত: ইস্তিগফার পাপ মোচনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তাকে সকল দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্তি দেবেন এবং তাকে এমনভাবে রিযিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।" (আবু দাউদ)।
কেন পড়বেন: মানুষ হিসেবে আমরা ভুল করি। নিয়মিত ইস্তিগফার করে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাইতে পারি এবং এর মাধ্যমে রিযিক ও মানসিক শান্তি লাভ করতে পারি।

৬. "আল্লাহুম্মাগফিরলি" (اللهم اغفرلي) - হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো।

ফজিলত: এটি সরাসরি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটি সহজ দু'আ। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন কাউকে মুসলিম হিসেবে গ্রহণ করতেন, তখন তাকে নামাজ শিখিয়ে এই দু'আ করতে বলতেন: "আল্লাহুম্মাগফির লি, ওয়ারহামনি, ওয়াহদিনি, ওয়াআফিনি, ওয়ারজুকনি" (হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো, আমার প্রতি দয়া করো, আমাকে পথপ্রদর্শন করো, আমাকে নিরাপত্তা দাও এবং আমাকে রিযিক দাও)। (সহীহ মুসলিম)।
কেন পড়বেন: ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়ার জন্য এই দু'আ খুবই কার্যকরী।

৭. "ইয়া রাব্বিগফিরলি" (يا رب اغفر لي) - হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো

অর্থ: হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো।

ফজিলত: এটিও ক্ষমা প্রার্থনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দু'আ। সূরা নূহ এর ১০ আয়াতে নূহ (আঃ) বলেছেন, "আর বলেছি, 'তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল'।" (কুরআন ৭১:১০)। ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং সন্তান দান করেন।
কেন পড়বেন: আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চাইলে তিনি অবশ্যই ক্ষমা করেন। এটি আমাদের দুর্বলতা স্বীকার এবং তাঁর মুখাপেক্ষী হওয়ার একটি মাধ্যম।

৮. "আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান-নার" (اللهم أجرني من النار) - হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো

অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।

ফজিলত: আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সকালে সাতবার 'আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান-নার' বলবে এবং সে দিন মারা যাবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। আর যে সন্ধ্যায় সাতবার বলবে এবং সে রাতে মারা যাবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।" (আবু দাউদ, তিরমিযী-তবে অনেকে এটিকে দঈফ বলেছেন, তবে আমলের জন্য জায়িয)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, "যখন তোমরা আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে, তখন বলবে: 'আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাহ' এবং যখন জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাইবে, তখন বলবে: 'আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান-নার'।" (তিরমিযী - হাসান সহীহ)।

কেন পড়বেন: জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য এটি একটি শক্তিশালী দু'আ।

৯. "সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম" (صلى الله عليه وسلم) - দরুদ ও সালাম

অর্থ: আল্লাহ তাঁর (মুহাম্মাদ সাঃ) উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।

ফজিলত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠের অসংখ্য ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর  দশবার রহমত বর্ষণ করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করবেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।" (সহীহ মুসলিম)।
কেন পড়বেন: এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের একটি উপায়। এটি আমাদের জীবনে বরকত ও কল্যাণ নিয়ে আসে।

১০. "লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" (لا حول ولا قوة إلا بالله) - নেই কোনো ক্ষমতা, নেই কোনো শক্তি আল্লাহ ব্যতীত

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ক্ষমতা ও শক্তি নেই।

ফজিলত: এটি জান্নাতের অন্যতম গুপ্তধন। আবু মুসা আশ'আরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনগুলোর একটি সম্পর্কে বলব না? সেটি হলো: 'লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ'।" (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। এটি বিপদাপদে আল্লাহর উপর ভরসা রাখার প্রতীক।
কেন পড়বেন: এটি মানুষকে আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হতে শেখায় এবং সকল প্রকার দুর্বলতা ও অক্ষমতা থেকে আল্লাহর সাহায্যে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

১১. "লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্ওয়ালিমীন" (لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين) - হে আল্লাহ, তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত

অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।

ফজিলত: এটি হযরত ইউনুস (আঃ)-এর দু'আ, যা তিনি মাছের পেটে থাকা অবস্থায় করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "ধুন-নুন (ইউনুস আঃ)-এর সেই দু'আ যা তিনি মাছের পেটে থাকা অবস্থায় করেছিলেন: 'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্ওয়ালিমীন', কোনো মুসলিম ব্যক্তি যখন কোনো বিপদে পড়ে এই দু'আ করবে, আল্লাহ অবশ্যই তার দু'আ কবুল করবেন।" (তিরমিযী)।
কেন পড়বেন: এটি যেকোনো বিপদ, দুশ্চিন্তা বা কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার এবং নিজের ভুল স্বীকার করার একটি শক্তিশালী দু'আ।

১২. "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" (لا إله إلا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم) - শাহাদাতাইন

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তাঁর উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।

ফজিলত: এটি ইসলামের শাহাদাতাইন বা সাক্ষ্য বাক্য। যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় এই কালিমা পাঠ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যার শেষ কথা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" (আবু দাউদ)।
কেন পড়বেন: এটি ঈমানের মূল ভিত্তি এবং প্রতি মুহূর্তে নিজেদের মুসলিম পরিচয়কে সুদৃঢ় করার উপায়।

উপসংহার:

এই দু'আ ও যিকিরগুলো শুধু মুখে বলার জন্য নয়, বরং এর অর্থ বুঝে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আন্তরিকতার সাথে পাঠ করলে আমাদের জীবনে এর প্রভাব অসাধারণ হতে পারে। প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝেও অল্প কিছু সময় বের করে এই আমলগুলো করার চেষ্টা করুন। ইনশাআল্লাহ, এর বরকতে আপনার ইহকালীন ও পরকালীন জীবন সুন্দর ও সফল হবে।

পড়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ ❤️

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url