স্ত্রীরা পরকীয়া করেন কেন? স্বামীদের জন্য চমকপ্রদ ইসলামিক বিশ্লেষণ
আজকের সমাজে একটা কষ্টকর কিন্তু বাস্তব প্রশ্ন ক্রমেই সামনে আসছে— "স্ত্রীরা পরকীয়া করেন কেন?"অনেকে এই প্রশ্নে শুধু দোষ খোঁজেন নারীর মধ্যে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়— কোনো সম্পর্ক ভেঙে গেলে দুই দিকেই আত্মসমালোচনা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন,
“তোমরা নিজেদের ঘরবাড়িতে শান্তি ও ভালোবাসা লাভ করো।” (সূরা রূম ৩০:২১)
এই আয়াতে স্পষ্ট— দাম্পত্য জীবনের মূল ভিত্তি হচ্ছে মাওয়াদ্দাহ (ভালোবাসা) এবং রাহমাহ (দয়া)। যখন এই দুইটি হারিয়ে যায়, তখন সম্পর্কের ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে।
ইসলাম নারীর পরকীয়াকে কঠিনতম গুনাহ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু কেন একজন নারী এমন পথে হাঁটে?
অনেক সময় এর পেছনে থাকে—
অনেক সময় এর পেছনে থাকে—
- 
স্বামীর অবহেলা বা মানসিক নির্যাতন,
- 
ভালোবাসার ঘাটতি,
- 
মানসিক একাকিত্ব,
- 
কিংবা প্রযুক্তির অপব্যবহার ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
ইসলাম স্বামীকে শুধু আর্থিক দায়িত্বে সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং মানসিক যত্ন, সময় দেওয়া, এবং ভালো আচরণেরও নির্দেশ দিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম আচরণ করে।” (তিরমিজি)
অতএব, সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব কেবল একজনের নয়— এটি দুইজনের যৌথ দায়িত্ব। আজকের আলোচনা সেই বাস্তবতা ও ইসলামের আলোকে গভীর বিশ্লেষণ।
ইশতেহার—হৃদয়ের কথা
আমরা এখানে কেন এসেছি? একটি অত্যন্ত গভীর আলোচনা শুরু করতে। আমাদের স্লোগান তো আপনারা জানেন: "নিজে জানুন অন্যকে জানান"। আমরা বিশ্বাস করি, শুধু তথ্য সংগ্রহ করা যথেষ্ট নয়। সেই তথ্য থেকে জীবনের Insight বের করে আনা, আর সেটা সবার সাথে শেয়ার করাই আমাদের আসল উদ্দেশ্য। আজকের টপিকটি অত্যন্ত সংবেদনশীল, তবে এই সময়ে এটি নিয়ে কথা বলা জরুরি। খুব জরুরি। পরকীয়া। শব্দটি শুনলেই বুকের ভেতরে কেমন যেন একটা মোচড় দিয়ে ওঠে, তাই না?
এটি কেবল একটি বিবাহিত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার গল্প নয়। এটি একটি পরিবারের, একটি প্রজন্মের, বিশ্বাসের কাঠামোর ধীরে ধীরে মৃত্যুর প্রতীক। মনোবিজ্ঞানীরা একে Social Disease বা সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আখ্যায়িত করেন । বেলজিয়ামের মনস্তাত্ত্বিক এস্থার পেরেল একে ভয়াবহ ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করেছেন । ভাবুন, আপনার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস—আপনার সংসার—সেটা নীরবে ধ্বংস হচ্ছে।
সহজ কথায়, পরকীয়া (Parakīẏā) হলো বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে অন্য কারো সাথে আবেগিক (Emotional) বা শারীরিক সংযোগ স্থাপন করা । এই প্রবন্ধটি আপনাদের জন্য, Dear husbands। যখন এমন কিছু ঘটে, তখন সমাজের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে স্ত্রীকে দোষারোপ করা—হয়তো তিনি 'ভালো স্ত্রী' নন, বা তিনি স্বামীকে ধরে রাখতে পারেননি। কিন্তু ইসলাম কি শুধু দোষারোপ করতে শেখায়? না, ইসলাম আমাদের শেখায় সমস্যার মূলে হাত দিতে। আমরা দেখব, কেন আপনার স্ত্রী—যিনি আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় আমানত—এই ভুল পথে পা বাড়াতে পারেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো: সেই শূন্যতা পূরণে ইসলামের Prophetic Model কী অসাধারণ শিক্ষা দেয়। শুধু স্ত্রীকে দোষ দিলে হবে না; আমাদের নিজেদের দায়িত্বগুলো বুঝে নিতে হবে।
পরকীয়া (Parakīẏā) বনাম যিনা (Zina)
আমাদের আলোচনা শুরু করার আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগত স্পষ্টতা আনা দরকার। শরীয়ত এবং আমাদের প্রচলিত আইনে পরকীয়া (Infidelity) এবং ব্যভিচার বা যিনা (Adultery) এক জিনিস নয়। হ্যাঁ, দুটিই পাপের দিকে নিয়ে যায়, এবং দুটিই পারিবারিক শান্তি নষ্ট করে। কিন্তু তাদের সংজ্ঞা, মাত্রা এবং শাস্তির বিধান ভিন্ন। এই পার্থক্যটি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আইনি এবং নৈতিক বিশ্লেষণের জন্য ।
পার্থক্য নির্ণয় (The Critical Distinction)
পরকীয়া (Parakīẏā) হলো বিবাহিত নারী বা পুরুষের নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে বিবাহোত্তর প্রেম, প্রণয় বা গভীর আবেগিক সংযোগ। এটি মূলত মানসিক ও আবেগিক ঘনিষ্ঠতা বোঝায় । এই সম্পর্ক গভীর যোগাযোগ, দেখা-সাক্ষাৎ, হাসি-তামাশা ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে । মনে রাখতে হবে, এই সম্পর্ক যৌন সঙ্গম পর্যন্ত গড়াতেও পারে, আবার নাও পারে ।
অন্যদিকে, ব্যভিচার বা যিনা (Zina) হলো বিবাহবহির্ভূত যৌন সঙ্গম (Sexual Intercourse) । যতক্ষণ পর্যন্ত শারীরিক মিলন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা পরকীয়া থাকে। শারীরিক মিলন হওয়া মাত্রই তা শরীয়তের ভাষায় যিনা হিসেবে সাব্যস্ত হয়।
এই পার্থক্য নির্ধারণের কারণ হলো শাস্তির বিধান। ইসলামের শরয়ী আইনে যিনার জন্য কঠোর নির্ধারিত শাস্তি (Hadd) রয়েছে । কিন্তু পরকীয়ার শাস্তি অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচারকের বিবেচনা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে ।
ইসলামে ব্যভিচারের ভয়াবহতা (The Gravity of Zina)
ইসলামে যিনা এক মহাপাপ। এটি এমন এক গুরুতর অপরাধ, যা অনেকগুলো পাপের উৎপত্তিস্থল এবং হত্যার পরই এর অবস্থান । আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? তিনি উত্তরে শিরকের পর নিজ সন্তানকে হত্যা করার কথা বলেছিলেন। তারপর বলেছিলেন, "নিজ প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।"
এই পাপ এত ভয়াবহ কেন? এর কারণ বহুস্তরীয়। এটি কেবল আল্লাহ ও ব্যক্তির হক নষ্ট করে না; এটি সমাজের মূল ভিত্তি পরিবারকে ধ্বংস করে। পরকীয়ার ফলে স্বামী বা স্ত্রীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়, পারিবারিক কাঠামো ভেঙে যায় এবং সবচেয়ে মারাত্মক পরিণতি হলো—সন্তানের বংশপরিচয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় । কারণ পরকীয়ার ফলে জন্ম নেওয়া সন্তান আইনত স্বামীর বলে বিবেচিত হলেও, সে তার নাও হতে পারে। এটি Hifz al-Nasl (বংশ রক্ষা)-এর ইসলামিক নীতির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
শাস্তি এবং প্রমাণের শর্ত: উদ্দেশ্য কী?
ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি (বিবাহিতদের জন্য রজম বা মৃত্যুদণ্ড, অবিবাহিতদের জন্য ১০০ বেত্রাঘাত) অত্যন্ত কঠোর । কিন্তু এর প্রমাণের শর্ত আরও বেশি কঠোর। যিনা প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই চারজন চাক্ষুষ সাক্ষী প্রয়োজন, যারা actual penetration নিজের চোখে দেখেছেন এবং তাদের বর্ণনায় মিল থাকতে হবে ।
এই কঠোর প্রমাণ পদ্ধতি একটি গভীর শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য তুলে ধরে। যদি আল্লাহ চাইতেন যে এই শাস্তি সহজে কার্যকর হোক, তবে প্রমাণের শর্ত এত কঠিন হতো না। শর্তের কঠোরতা প্রমাণ করে যে, শারঈ আইনের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো অপরাধটিকে কঠিনভাবে নিবারণ করা (Deterrence) এবং সমাজের নৈতিক কাঠামোকে রক্ষা করা, কেবল শাস্তি কার্যকর করা (Execution) নয়। এর অর্থ হলো, ইসলাম শাস্তির চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা (Prevention) গ্রহণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। এমনকি প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনলে (Qadhf), অভিযোগকারী নিজেই Hadd অপরাধের জন্য ৮০ ঘা বেত্রাঘাতের শাস্তি পেতে পারেন । এটি সমাজে চরিত্রহনন রোধ করার জন্য একটি শক্তিশালী ঢাল।
সেকুলার আইনি ব্যবস্থার দুর্বলতা
ঐতিহাসিকভাবে আমাদের দেশে প্রচলিত সেকুলার আইনও এ বিষয়ে দুর্বলতা দেখিয়েছিল। ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো বিবাহিত নারী পরকীয়ায় জড়াতেন, তবে তাঁর স্বামী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারতেন না; শুধুমাত্র অপর পুরুষটির বিরুদ্ধে মামলা চলত এবং নারীটিকে অপরাধের সহযোগী হিসেবে গণ্য করে কোনো শাস্তি দেওয়া হতো না ।
এই ব্যবস্থা বহু বছর ধরে নারীকে স্বামীর ‘সম্পত্তি’ হিসেবে বিবেচনা করত, যেখানে কেবল সেই পুরুষ শাস্তি পেত যে স্বামীর "অধিকার" লঙ্ঘন করেছে। এই আইনি বৈষম্যটি শারঈ বিধানের উল্টো, যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়ের শাস্তি সমান (যদি প্রমাণ হয়) । এই ধরণের আইনি বৈষম্য সমাজের নৈতিক কাঠামোতে দ্বিমুখী মানদণ্ড তৈরি করে, যা পুরুষের প্রতি নমনীয় এবং নারীর প্রতি কঠোর সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
৩. মূল কারণ: হৃদয়ে সৃষ্ট শূন্যতা (The Core Reason: The Void in the Heart)
স্ত্রীরা কেন পরকীয়ায় জড়ান? এই প্রশ্নের উত্তরে কেবল নৈতিক দুর্বলতার কথা বললে পুরো ছবিটি দেখা যায় না। মানব মন এবং দাম্পত্য সম্পর্ক জটিল। এই সম্পর্কের গভীরে যখন শূন্যতা তৈরি হয়, তখন সেই ফাঁকা জায়গায় অন্য কেউ এসে দাঁড়াতে চায়। মনোবিজ্ঞানীরা এবং ইসলামিক স্কলাররা এই কারণগুলিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করেছেন: মনস্তাত্ত্বিক শূন্যতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং ঈমানী দুর্বলতা।
মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (The Psychological Void)
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, পরকীয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো শূন্যতা বা The Void । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি দূরত্ব বা Communication Gap বাড়ে, তখন সেই শূন্যতা পূরণ করতে মানুষ বাইরে আশ্রয় খোঁজে।
- দৈহিক অতৃপ্তি (Sexual Dissatisfaction): যৌনতা মানুষের একটি শরীরবৃত্তীয় চাহিদা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি স্বামী-স্ত্রীর যৌনজীবন দুর্বল হয় বা স্বামীর উদাসীনতা থাকে (যেমন: inattention to the sexual needs of the spouse বা spouse's premature ejaculation), তবে অপর ব্যক্তির প্রতি আসক্তি তৈরি হতে পারে ।
- মানসিক ও আবেগিক চাহিদা: অনেক সময় আর্থিক প্রয়োজন, স্ট্যাটাস বাড়ানোর আকাঙ্ক্ষা , বা নিছক মানসিক সমস্যার কারণে (যেমন বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার) মানুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে । স্বামীর পক্ষ থেকে মানসিক অযত্ন, পরিবারের প্রতি নিম্নমানের সহযোগিতা, বা Commitment এবং Responsibility-এর অভাব যখন অনুভূত হয়, তখন স্ত্রী নিজেকে দুর্বল ও একাকী মনে করেন। এই Feeling weak থেকে মুক্তি পেতে অনেকে অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হন ।
- কৌতূহল ও দূরত্ব: অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, দীর্ঘসময় একসঙ্গে না থাকা, বা কৌতূহল (Curiosity) থেকেও পরকীয়ার আগ্রহ বাড়ে। অনেকে অন্য আরেকটি শরীর কেমন, একে জানার একটি আগ্রহ অনুভব করে । সাইকোলজিস্টরা উল্লেখ করেছেন, অনেকে আবার মিডিয়া, যেমন পর্নোসাইট দেখে বা বিদেশী সিরিয়াল দেখে পরকীয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করে ।
ইসলামিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট (Islamic Social Context)
ইসলামী শিক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের দুর্বলতাও পরকীয়ার পথ প্রশস্ত করে।
- ঈমানী দুর্বলতা ও শিক্ষার অভাব: পরকীয়ার ভয়াবহ শাস্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং আল্লাহর ভয় (Taqwa) না থাকার কারণেই মানুষ এই নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়ে । যখন মানুষ হালাল-হারামের সীমারেখা ভুলে যায়, তখনই শয়তান সুযোগ নেয়।
- অবাধ মেলামেশা (Free Mixing) এবং পর্দার অভাব: বর্তমান সমাজে নারীরা চাকুরী, ব্যবসা, লেখাপড়া, চিকিৎসা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বাড়ির বাইরে যান। যদিও প্রয়োজন অনুসারে বাইরে যাওয়া বৈধ, কিন্তু সেখানে যদি ইসলামী বিধান (পর্দা ও শালীনতা) উপেক্ষা করা হয়, তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হয় । এই সুযোগই প্রথমে আকর্ষণ, তারপর আলাপচারিতা, এবং অবশেষে পরকীয়ার বীজ বপন করে । রাসূল (সাঃ)-এর হাদিস অনুযায়ী, নারী যখন বাইরে যায়, শয়তান তাকে পুরুষের চোখে মোহময় করে তোলে । এই কারণেই ইসলামে পর্দার বিষয়ে এত কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে—পর্দা কেবল পোশাক নয়, এটি ফিতনা (Trial/Temptation) থেকে সমাজকে রক্ষা করার একটি দুর্গ।
- প্রযুক্তির ফিতনা (The Fitnah of Technology): স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাদি প্রযুক্তি সহজেই মানুষকে নতুন মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে । এই যোগাযোগগুলো গোপনে শুরু হয় এবং দ্রুত আবেগিক সম্পর্কে রূপ নেয়, যা দাম্পত্যের শূন্যতা পূরণ করার একটি অবৈধ মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।
- সামাজিক চাপ এবং পলিগ্যামির ভূমিকা (Social Stigma on Polygamy): এটি একটি স্পর্শকাতর বিশ্লেষণ। ইসলাম একজন সক্ষম ও ন্যায়পরায়ণ পুরুষকে একাধিক বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছে (নিসা ৪/৩) । কিন্তু সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেক পুরুষ দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারেন না, এমনকি যখন প্রথম স্ত্রীর শারীরিক বা মানসিক চাহিদা পূরণে ঘাটতি থাকে। এই অতৃপ্তি বা চাহিদা পূরণের বৈধ পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বামী-স্ত্রী উভয়েই অবৈধ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকতে পারেন ।
Blame Culture-এর সমালোচনা
অনেক সময় সাংস্কৃতিক প্রভাবে স্ত্রীকে দোষারোপ করার একটি প্রবণতা দেখা যায়—তিনি স্বামীকে খুশি রাখতে পারেননি, তাই এমন হয়েছে । ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই Blame Culture সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মহানবী (সাঃ) কখনোই এই ধরণের একপেশে দোষারোপ সমর্থন করেননি। তিনি জোর দিয়েছেন স্বামীর উত্তম আচরণের উপর । একজন স্বামীর দায়িত্ব হলো তাঁর স্ত্রীর জন্য Rahmah (করুণা) ও Sakinah (প্রশান্তি) দিয়ে ভরা পরিবেশ তৈরি করা, যাতে পরকীয়ার মতো মহাপাপের সুযোগ না থাকে।
স্বামীদের জন্য শিক্ষা: নবীজির (সাঃ) পরিবার গড়ার মডেল (Lessons for Husbands: The Prophetic Model)
আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো পরকীয়াকে প্রতিরোধ করা। আর প্রতিরোধ সম্ভব কেবল Prophetic Guidance অনুসরণ করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পরিবার গড়ার এমন এক Model তৈরি করে গেছেন, যেখানে ভালোবাসা, সম্মান এবং দায়িত্বশীলতার পূর্ণ প্রকাশ দেখা যায়।
শ্রেষ্ঠত্বের সংজ্ঞা (The Definition of Excellence)
স্বামী মানে শুধু আদেশ জারি করা নয়; স্বামী মানে দায়িত্বশীলতা (Responsible Guardian) । রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন: "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে তার পরিবারের নিকট শ্রেষ্ঠ। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।"
এটি স্বামীদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আপনার স্ত্রী আপনার শ্রেষ্ঠত্বের প্রথম এবং প্রধান সাক্ষী। মহানবী (সাঃ) মৃত্যুর পূর্বে নামাজ এবং নারীর প্রতি সদয় আচরণের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন: "তোমরা নারীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। তারা তোমাদের হাতে বন্দীর মতো... তাদের অধিকার হলো তোমরা তাদের খাবার ও পোশাকের বিষয়ে উত্তম আচরণ করবে" । এই Rahmah (করুণা) যখন দাম্পত্যের ভিত্তি হয়, তখন সম্পর্কে শূন্যতা তৈরি হতে পারে না।
মানসিক ও আবেগিক চাহিদা পূরণ (Emotional and Psychological Fulfillments)
দাম্পত্যে মানসিক চাহিদা পূরণ শারীরিক চাহিদা পূরণের চেয়ে কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
- সম্মান ও স্বীকৃতি (Respect and Public Appreciation): স্বামী হিসেবে আপনার স্ত্রীকে সম্মান ও স্বীকৃতি দিন। রাসূল (সাঃ) প্রকাশ্যে আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন । তিনি তাঁকে 'মানুষের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়' বলেছিলেন। এই প্রকাশ্যে ভালোবাসার ঘোষণা স্ত্রীকে মানসিক নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাস দেয়। এমনকি তিনি তাঁর প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রাঃ)-এর বন্ধুদের জন্যও তাঁর মৃত্যুর পরেও উপহার পাঠাতেন । এই কাজগুলো শেখায়, স্ত্রী শুধু ঘরের মানুষ নন, তিনি আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- রাগ সামলানো (Handling Anger) ও সুরক্ষা: যখন স্ত্রী রেগে যান বা উচ্চস্বরে কথা বলেন, অনেক স্বামীই হয়তো কর্তৃত্ব দেখিয়ে তাঁকে থামিয়ে দিতে চান। কিন্তু রাসূল (সাঃ)-এর মডেল ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। একবার আয়েশা (রাঃ) রেগে কথা বললে তাঁর বাবা আবু বকর (রাঃ) তাঁকে শাসন করতে উদ্যত হন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) দ্রুত তাঁকে বাধা দেন এবং আবু বকর (রাঃ) চলে যাওয়ার পর আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, "দেখলে, আমি তোমাকে তোমার বাবার হাত থেকে রক্ষা করলাম?"এই ঘটনা দেখায় যে, একজন শ্রেষ্ঠ স্বামী কেবল শাসন করেন না, রাগের সময়েও স্ত্রীকে রক্ষা করেন এবং সমর্থন দেন। এটি স্ত্রীকে গভীর মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, যা অন্য কোথাও খোঁজার প্রয়োজন হয় না।
- আলোচনা ও পরামর্শ (Consultation): গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করা Prophetic Sunnah। হুদায়বিয়ার সন্ধির মতো কঠিন সময়েও নবীজি (সাঃ) তাঁর স্ত্রী উম্মে সালামাহ (রাঃ)-এর সাথে পরামর্শ করেছিলেন, এবং সেই পরামর্শ মেনে চলেছিলেন । স্ত্রীকে গুরুত্ব দিন। তাঁর মতামতকে মূল্যায়ন করুন। এই Consultation স্ত্রীর মনে এই ধারণা তৈরি করে যে তিনি কেবল গৃহিণী নন, তিনি আপনার জীবনের একজন অপরিহার্য অংশীদার।
শারীরিক হক ও পরিচ্ছন্নতা (Physical Rights and Hygiene)
স্বামীর কর্তব্য শুধু স্ত্রীর শারীরিক চাহিদা পূরণে মনোযোগী হওয়া নয়, নিজেকেও পরিচ্ছন্ন রাখা। ইসলাম স্বামীদের আদেশ দেয়, তাঁরা যেন নিজেদের সর্বদা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি রাখেন এবং সুবাসিত হন (Susuajjito o Subashito) ।
স্ত্রীর শারীরিক চাহিদা পূরণ করা স্বামীর এক অনস্বীকার্য অধিকার । এই চাহিদা পূরণে অবহেলা করলে বা উদাসীনতা দেখালে, সেই শূন্যতা স্ত্রীর মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে এবং পরকীয়ার মতো মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলির জন্ম দেয় । রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমার ওপর তোমার শরীরের হক আছে; তোমার ওপর তোমার চোখের হক আছে এবং তোমার ওপর তোমার স্ত্রীরও হক আছে।"
ভারসাম্যের শিক্ষা (The Lesson of Balance)
আমরা জানি, হাদিসে সেই নারীকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে, যে রাত যাপন করে অথচ তার স্বামী তার ওপর রাগান্বিত থাকেন । কিন্তু এই হাদিসের গভীরে একটি ভারসাম্য লুকিয়ে আছে। আল্লাহভীতি (Taqwa) যেমন স্ত্রীর কর্তব্য, তেমনি Rahmah ও উত্তম আচরণ স্বামীর কর্তব্য।
যদি একজন স্বামী Prophet Muhammad (সাঃ)-এর মডেল অনুসরণ করে তাঁর স্ত্রীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও ভালোবাসা দেন, তখন সেই স্ত্রী স্বেচ্ছায় স্বামীর আনুগত্য করেন এবং তার হক নষ্ট করা কঠিন হয়ে যায় । একজন স্ত্রী যদি তার স্বামীর হক যথার্থরূপে জানতেন, তবে স্বামীর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়েই থাকতেন । এই গভীর আনুগত্য কেবল চাপিয়ে দেওয়া যায় না; তা স্বামীর শ্রেষ্ঠ আচরণের মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
সুরক্ষার দেওয়াল: প্রতিরোধমূলক কৌশল (Building the Wall of Protection: Preventive Measures)
পরকীয়াকে সমাজের মূল থেকে উপড়ে ফেলতে হলে আমাদের শক্তিশালী প্রতিরোধমূলক কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এই প্রতিরোধ ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক পর্যায়ে কাজ করবে।
পর্দার গভীর অর্থ এবং ফিতনা নিয়ন্ত্রণ
পর্দা কেবল একটি পোশাক নয়, এটি Fitnah থেকে বাঁচার একটি কৌশল। নারীদের বাইরে বের হওয়ার সময় ইসলামী বিধান, বিশেষ করে Pardāh-এর নীতি মেনে চলতে হবে।
এই বিষয়ে স্বামীদের সচেতন হতে হবে। অবাধ মেলামেশা (Free Mixing) হলো পরকীয়ার প্রথম ধাপ। অফিসে, বন্ধুদের আড্ডায় বা যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে পুরুষ ও নারীর মাঝে শরীয়ত-সম্মত দূরত্ব বজায় রাখা অপরিহার্য। রাসূল (সাঃ) স্বামীর ভাইকে (Brother-in-law) মৃত্যুর মতো ভয়াবহ বলেছেন । যদি নিকটাত্মীয়ের ব্যাপারে এত কঠোরতা থাকে, তবে বাইরের পুরুষের সাথে অনিয়ন্ত্রিত মেলামেশা বা গোপনীয়তা শেয়ার করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ যোগাযোগ বন্ধ করাও এই প্রতিরোধের অংশ ।
পারিবারিক সহযোগিতা ও কমিটমেন্ট (Commitment Cooperation)
দাম্পত্য সম্পর্ক একটি সম্মিলিত উদ্যোগ (Partnership) । স্বামীর যাবতীয় খিদমত করা, ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ছেলে-মেয়েদের সভ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব শুধু স্ত্রীর নয় । স্বামীরও উচিত সহযোগিতা করা এবং পারিবারিক দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া। যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে Commitment এবং Cooperation-এর অভাব দেখা যায়, তখনই দাম্পত্যে শূন্যতা তৈরি হয়, যা অন্য কাউকে সেই ফাঁকা জায়গায় প্রবেশের সুযোগ দেয় ।
স্ত্রীর কর্তব্য হলো স্বামীর অনুপস্থিতিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজের ইজ্জত রক্ষা করা। এটি এক আমানত । আর সাধবী স্ত্রী তো সেই, যিনি স্বামীকে হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকার অসিয়ত করেন । এই পারস্পরিক দায়িত্বশীলতা পরিবারকে মজবুত করে।
নৈতিক শিক্ষা এবং সন্তানের সুরক্ষা
পারিবারিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে ধর্মের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি । শিশুদের নৈতিক শিক্ষা জোরালো করুন। নৈতিকবোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি হলে সমাজে পরকীয়া কমতে পারে ।
বাবা-মার পরকীয়া সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে। এটি সন্তানের মধ্যে মানসিক বিষণ্নতা (Depression) ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্ম দিতে পারে । আপনি যে পাপ করছেন, তার ফল আপনার সন্তানও ভোগ করছে—এই উপলব্ধি পরকীয়ার মতো মহাপাপ থেকে বিরত থাকার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী কারণ হওয়া উচিত।
পেশাদার সহায়তা (Professional Islamic Counselling)
যদি দাম্পত্যে সমস্যা স্থায়ী রূপ নেয়, বা মানসিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়, তবে দেরি না করে পেশাদার সাহায্য নিন। সম্পর্ককে রক্ষা করার জন্য Therapy নেওয়া দুর্বলতা নয়, এটি বরং সম্পর্ক বাঁচানোর জন্য দৃঢ় Commitment-এর প্রমাণ।
ইসলামিক কাউন্সেলিং (Faith-based Therapy) এক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে । একজন মুসলিম থেরাপিস্ট বা কাউন্সিলর শারঈ এবং মনস্তাত্ত্বিক নীতিগুলির ওপর ভিত্তি করে পরিবারকে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারেন । এই ধরণের সহায়তা দাম্পত্যে মানসিক চাপ ও দূরত্ব কমাতে এবং শান্তির পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে ।
আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার (Our Collective Commitment)
আমরা দেখেছি, স্ত্রীর পরকীয়ায় জড়ানোর কারণগুলো জটিল এবং বহুস্তরীয়—যার মূলে আছে মানসিক শূন্যতা, স্বামীর উত্তম আচরণের অভাব, এবং ইসলামিক বিধানের প্রতি অবহেলা।
স্বামীদের জন্য শিক্ষা খুব স্পষ্ট: আপনার স্ত্রীকে কেবল কর্তব্য পালনের সঙ্গী হিসেবে নয়, বরং Rahmah ও Sakinah-র উৎস হিসেবে দেখুন। নবীজির (সাঃ) দেখানো পথ অনুসরণ করুন—সেখানে আছে ভালোবাসা, সম্মান, এবং গভীর Protection। পরিবারকে রক্ষা করুন। মনে রাখবেন, স্ত্রী আপনার জীবনের আমানত, আর এই আমানতের প্রতি উত্তম ব্যবহার করাই আল্লাহর নির্দেশ।
এই শিক্ষা নিজে জানুন, নিজের জীবনে প্রয়োগ করুন, এবং অন্যকে জানান। আসুন, আমরা এমন একটি সমাজ গড়ি যেখানে প্রতিটি পরিবার হবে শান্তির দুর্গ—যেখানে শয়তান তার ফিতনা নিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ পাবে না। পরিবার রক্ষা করা আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার।
🌸 শেষকথা
পরকীয়া কোনো সমাধান নয়— এটি সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। একজন স্ত্রী যদি পরকীয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে সেটি তার ঈমান ও পরিবারের জন্য ভয়াবহ ধ্বংসের কারণ। তবে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা জরুরি— কেন এমন ঘটছে, এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়।
স্বামীদের উচিত স্ত্রীর প্রতি মনোযোগী হওয়া, তাদের অনুভূতি ও প্রয়োজনকে সম্মান করা। অনেক সময় নারী শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে অবহেলিত হয়। আর এই ফাঁক থেকেই জন্ম নেয় অন্য কারও প্রতি আকর্ষণ।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন,
“জিনা’র কাছেও যেও না, এটি অশ্লীল কাজ এবং অত্যন্ত মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা ১৭:৩২)
এ আয়াত শুধু কাজটি থেকে নয়, বরং তার কারণ ও পরিবেশ থেকেও দূরে থাকতে বলেছেন।
অতএব, পরিবারে ভালোবাসা, আল্লাহভীতি এবং যোগাযোগ— এই তিনটি স্তম্ভে দাম্পত্য জীবন টিকে থাকে।
অতএব, পরিবারে ভালোবাসা, আল্লাহভীতি এবং যোগাযোগ— এই তিনটি স্তম্ভে দাম্পত্য জীবন টিকে থাকে।
যদি কোনো সম্পর্ক টানাপোড়েনে পড়ে, তবে ইসলাম বলে— আল্লাহর কাছে দোয়া করো, পারস্পরিক আলাপ করো, প্রয়োজনে ইসলামিক কাউন্সেলিং নাও। কারণ, দাম্পত্যে “বোঝাপড়া”ই শান্তির চাবিকাঠি।
💌 কল টু অ্যাকশন (CTA)
- 👉 সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে দেরি না করে ইসলামিকভাবে সমাধান খুঁজুন।
- 📖কুরআন ও হাদীসের আলোকে দাম্পত্য জীবনের গাইড পড়তে ভিজিট করুন: www.kaziariful.com
- ❤️ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখুন, গুনাহ নয়— ভালোবাসা বেছে নিন।
❓ FAQ (সাধারণ প্রশ্নোত্তর)
প্রশ্ন ১: ইসলাম অনুযায়ী স্ত্রী পরকীয়া করলে কী শাস্তি?
- উত্তর: ইসলামে ব্যভিচার বা পরকীয়া গুরুতর গুনাহ। প্রমাণিত হলে শাস্তি কঠোর— বিবাহিত হলে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে (ইসলামি শরিয়তের শর্তসাপেক্ষে)।
প্রশ্ন ২: সব দোষ কি স্ত্রীর?
- উত্তর: না। ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই দাম্পত্য রক্ষায় সমানভাবে দায়ী করেছে। অবহেলা, খারাপ ব্যবহার বা যোগাযোগের অভাব উভয়েরই দায়িত্বে পড়ে।
প্রশ্ন ৩: স্ত্রীকে কিভাবে বোঝানো যায় যাতে পরকীয়া থেকে বিরত থাকে?
- উত্তর: আবেগ ও রাগ নয়, বরং ভালোবাসা ও ইসলামি পরামর্শের মাধ্যমে বোঝানো উচিত। সালাত, দোয়া, এবং আল্লাহভীতি জাগিয়ে তুলুন।
প্রশ্ন ৪: স্বামী কীভাবে নিজেকে ঠিক রাখবেন?
- উত্তর: রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন, ইসলামের আদেশ মেনে স্ত্রীকে সম্মান করুন, এবং ঘরে শান্তির পরিবেশ তৈরি করুন।


 
 
 
 
 
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url