আপনার ফোন কি হ্যাক হয়েছে? ৫ মিনিটে Security Check-up করে হ্যাকারকে বিদায় জানান!
একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি... আপনার ফোন কি আর আপনার নেই?
মাঝরাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। পাশে রাখা ফোনটার স্ক্রিনটা কেমন যেন জ্বলে উঠেই আবার নিভে গেল। আপনি কি ভুল দেখলেন? নাকি... মনের ভুল? কিন্তু পরদিন সকালে দেখলেন, ফোনের চার্জ প্রায় শেষ, যদিও রাতে ফুল চার্জ দিয়েই ঘুমিয়েছিলেন। ফোনটা ধরতেই কেমন অস্বাভাবিক গরম লাগলো। আর তখন থেকেই মনের ভেতর একটা অস্বস্তিকর কাঁটা খচখচ করছে। আচ্ছা, আপনার ফোনটা কি আর শুধু আপনারই আছে? নাকি এর ভেতরে গোপনে বাসা বেঁধেছে অন্য কেউ?
এই অনুভূতিটা আমাদের অনেকেরই পরিচিত। আমাদের ফোন এখন আর শুধু একটা ডিভাইস নয়; এটা আমাদের ডিজিটাল আত্মা, আমাদের পার্সোনাল ডায়েরি, আমাদের ব্যাংকের ভল্ট, আমাদের স্মৃতির অ্যালবাম—সবকিছু। আমাদের সবথেকে গোপন কথা, ব্যক্তিগত ছবি, আর্থিক লেনদেনের তথ্য, সবকিছুই আমরা বিশ্বাস করে তুলে দিয়েছি এই ছোট্ট যন্ত্রটার হাতে। কিন্তু কী হবে, যদি সেই সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুটিই গোপনে আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে? যদি আপনার প্রতিটি কথা, প্রতিটি মেসেজ, এমনকি আপনার ক্যামেরা দিয়ে আপনার অজান্তেই কেউ আপনাকে দেখতে থাকে?
এই ভয়টা অমূলক নয়। এই অস্বস্তিটাই আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যাল। এই যুগে, Spyware বা হ্যাকিং কোনো সাই-ফাই সিনেমার গল্প নয়, এটা একটা কঠিন বাস্তবতা। আপনার ফোনে লুকিয়ে থাকা একটা ছোট্ট অ্যাপ, একটা ডিজিটাল গুপ্তচর, আপনার পুরো জীবনটাকে তছনছ করে দিতে পারে। কিন্তু ভয় পেয়ে হাল ছেড়ে দিলে তো চলবে না। ভয়কে জয় করতে হবে তথ্য আর সঠিক পদক্ষেপ দিয়ে। আমি এখানে আছি আপনাকে সেই পথ দেখানোর জন্য। আমরা একসাথে আপনার ফোনের একজন গোয়েন্দা হয়ে উঠব। আমরা ক্লু খুঁজব, প্রমাণ জোগাড় করব এবং শেষ পর্যন্ত সেই অনাহূত অতিথিকে আমাদের ডিজিটাল জীবন থেকে চিরতরে বিদায় জানাব। আমাদের ব্লগের মূলমন্ত্র হলো - 'নিজে জানুন, অন্যকে জানান'। আর আজ, আমরা প্রথমে নিজের সবচেয়ে পার্সোনাল ডিভাইসটাকে জানব, এর ভেতরের প্রতিটি কোণ ভালোভাবে চিনব। চলুন, আর এক মুহূর্তও দেরি না করে শুরু করা যাক আপনার ফোনের গোয়েন্দাগিরি!
The Investigation: আপনার ফোন কি গোপনে সাহায্য চাইছে?
হ্যাকার বা স্পাইওয়্যার হলো নীরব ঘাতক। এরা এমনভাবে আপনার ফোনে লুকিয়ে থাকে যে আপনি টেরও পান না। কিন্তু আপনার ফোন, আপনার বিশ্বস্ত সঙ্গী, আপনাকে ঠিকই কিছু সিগন্যাল পাঠাতে থাকে। সে তার ভাষায় আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে কিছু একটা গণ্ডগোল চলছে। এই লক্ষণগুলো হলো আপনার ফোনের SOS বা সাহায্যের আর্তি। চলুন, এই লক্ষণগুলো মিলিয়ে দেখি এবং এর পেছনের আসল কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করি।
The Digital Fever (ফোনটা কি Heater হয়ে গেছে?)
ভাবুন তো, কোনো কারণ ছাড়াই যদি আপনার শরীর সবসময় গরম থাকে, তার মানে ভেতরে কোনো ইনফেকশন বা অসুখ বাসা বেঁধেছে। ফোনের ব্যাপারটাও ঠিক তাই। আপনি হয়তো ফোনটা ব্যবহারই করছেন না, টেবিলের ওপর সাইলেন্টলি পড়ে আছে, কিন্তু হাতে নিতেই মনে হলো যেন একটা চায়ের কাপ ধরেছেন! এই অস্বাভাবিক গরম হওয়াটা একটা বড় Red Flag। এর কারণ হলো, আপনার ফোনের প্রসেসর (যেটাকে ফোনের ব্রেইন বলা যায়) কোনো বিশ্রাম পাচ্ছে না। Background-এ লুকিয়ে থাকা কোনো স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার nonstop কাজ করে যাচ্ছে—হয়তো আপনার ডেটা কপি করছে, আপনার লোকেশন ট্র্যাক করছে বা আপনার কথা শুনছে। এই অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই আপনার ফোনের শরীর, অর্থাৎ প্রসেসর, জ্বরের রোগীর মতো গরম হয়ে থাকে।
Chronic Fatigue Syndrome (Battery যাচ্ছে কই?)
যে ফোনটা আগে একবার চার্জ দিলে সারাদিন চলে যেত, সেটা এখন দুপুর গড়ানোর আগেই চার্জের জন্য কান্না জুড়ে দেয়। রাতে ১০০% চার্জ দিয়ে ঘুমাচ্ছেন, সকালে উঠে দেখছেন ৫০% হাওয়া! ব্যাটারিটা গেল কই? এটা ফোনের ডিজিটাল 'ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম'। একটি সুস্থ ফোন যখন আপনি ব্যবহার করেন না, তখন সে 'ডিপ স্লিপ' মোডে চলে যায়, শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু হ্যাকড হওয়া ফোন কখনও ঘুমায় না। কারণ এর ভেতরে থাকা স্পাইওয়্যার ২৪/৭ জেগে থাকে। সে অনবরত আপনার তথ্য সংগ্রহ করে আর সেগুলো তার মনিবের (হ্যাকার) কাছে পাঠাতে থাকে। এই গুপ্তচরবৃত্তির জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়, আর সেই শক্তির জোগান দিতে গিয়েই আপনার ফোনের ব্যাটারি অসময়ে মারা যায়।
The Mysterious Weight Gain (Data শেষ, মাস শেষ হয়নি)
আপনি হয়তো খুব হিসেব করে মোবাইল ডেটা ব্যবহার করেন। মাসের ২০ তারিখেই দেখলেন আপনার পুরো মাসের ডেটা প্যাক শেষ! অথচ আপনি তেমন কোনো ভিডিও দেখেননি বা বড় ফাইল ডাউনলোড করেননি। তাহলে ডেটাগুলো গেল কোথায়? এটাকে ফোনের 'রহস্যময় ওজন বৃদ্ধি'র সাথে তুলনা করা যায়। এই অতিরিক্ত 'ওজন' হলো আপনার ব্যক্তিগত তথ্য—ছবি, কন্টাক্ট লিস্ট, মেসেজ, যা আপনার অজান্তেই আপনার ফোন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো হ্যাকারের সার্ভারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। Wi-Fi বন্ধ থাকা অবস্থায় যদি দেখেন কোনো অজানা কারণে আপনার Mobile Data অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে ফুরিয়ে যাচ্ছে, তাহলে প্রায় নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার ফোন থেকে গোপনে ডেটা চুরি হচ্ছে।
The Brain Fog (Performance একদম Slow)
আপনার সুপার-ফাস্ট ফোনটা কি ইদানীং কচ্ছপের মতো আচরণ করছে? অ্যাপ খুলতে দেরি হচ্ছে? স্ক্রল করতে গেলে আটকে যাচ্ছে (Lag করছে)? বা যখন-তখন হ্যাং হয়ে যাচ্ছে? এটাকে বলা যায় ফোনের 'ব্রেইন ফগ'। এর কারণ হলো, স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যারগুলো এতটাই লোভী যে তারা ফোনের বেশিরভাগ RAM (Random Access Memory) এবং প্রসেসিং পাওয়ার দখল করে নেয়। ফলে, আপনার দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স আর অবশিষ্ট থাকে না। ঠিক যেমন একজন মানুষের মাথায় অনেক দুশ্চিন্তা থাকলে সে কোনো সাধারণ কাজে মনোযোগ দিতে পারে না, তেমনি স্পাইওয়্যারের চাপে আপনার ফোনের পারফরম্যান্সও একদম ভেঙে পড়ে।
The Unwanted Noise (Pop-up Ads এবং Strange Apps)
আপনি হয়তো ফোনের গ্যালারিতে ছবি দেখছেন, হঠাৎ করে স্ক্রিন জুড়ে ভেসে উঠল একটা আজেবাজে বিজ্ঞাপন। অথবা একদিন সকালে দেখলেন, আপনার ফোনে এমন একটা অ্যাপ ইন্সটল হয়ে আছে যা আপনি জীবনেও দেখেননি। এই লক্ষণগুলো হলো ফোনের অসুস্থতাজনিত 'প্রলাপ বকা'র মতো। এগুলো সাধারণত Adware (যে ম্যালওয়্যার শুধু বিজ্ঞাপন দেখায়) বা অন্য কোনো ভাইরাসের লক্ষণ, যা আপনার ফোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করছে এবং আপনাকে বিরক্তিকর বা বিপজ্জনক লিঙ্কে ক্লিক করতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।
এই লক্ষণগুলো একা একা ঘটলে তার অন্য কোনো সাধারণ কারণও থাকতে পারে। কিন্তু যদি বেশ কয়েকটি লক্ষণ একসাথে আপনার ফোনে দেখা দেয়, তাহলে আর বসে থাকার সময় নেই। এবার প্রমাণ খোঁজার পালা।
আপনার ফোনের SOS: লক্ষণ এবং তার পেছনের আসল কারণ
নিচের এই টেবিলটি আপনাকে সাধারণ সমস্যা এবং বিপজ্জনক সমস্যার মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করবে।
|
লক্ষণ (Symptom)
|
সাধারণ কারণ (Common/Innocent Reason)
|
বিপজ্জনক কারণ (The Dangerous Reason - Hacking/Spyware)
|
আপনার প্রথম পদক্ষেপ (Your First Step)
|
|---|---|---|---|
|
ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়া
|
ব্যাটারি পুরোনো হয়ে গেছে, স্ক্রিনের ব্রাইটনেস অনেক বেশি, বা সম্প্রতি কোনো OS আপডেট হয়েছে।
|
Background-এ কোনো স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার অনবরত চলছে এবং ডেটা পাঠাচ্ছে।
|
Settings Battery Battery usage-এ গিয়ে দেখুন কোন অ্যাপ সবচেয়ে বেশি চার্জ ব্যবহার করছে।
|
|
ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া
|
অনেকক্ষণ ধরে গেম খেলা, সরাসরি রোদের নিচে ফোন ব্যবহার করা, বা চার্জে দিয়ে ফোন চালানো।
|
প্রসেসরকে ব্যবহার করে স্পাইওয়্যার ক্রমাগত ডেটা প্রসেস করছে বা ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করছে।
|
ফোন ব্যবহার না করা অবস্থায়ও যদি গরম থাকে, তাহলে ব্যাকগ্রাউন্ডে কী চলছে তা চেক করুন।
|
|
মোবাইল ডেটা দ্রুত শেষ
|
কোনো অ্যাপের অটোমেটিক আপডেট চালু থাকা, Background-এ YouTube বা Facebook ভিডিও প্লে হওয়া।
|
আপনার ব্যক্তিগত ফাইল, ছবি, এবং ডেটা আপনার অজান্তেই কোনো হ্যাকারের সার্ভারে আপলোড হচ্ছে।
|
Settings Network App data usage-এ গিয়ে দেখুন কোন অ্যাপ অস্বাভাবিক ডেটা ব্যবহার করছে।
|
|
ফোন স্লো বা হ্যাং করা
|
ফোনের স্টোরেজ প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে, অনেকগুলো অ্যাপ একসাথে খোলা আছে, বা ফোনটি অনেক পুরোনো মডেলের।
|
ম্যালওয়্যার ফোনের RAM এবং CPU রিসোর্স দখল করে নিয়েছে, যার ফলে স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা কমে গেছে।
|
최근 অ্যাপ লিস্ট এবং স্টোরেজ চেক করুন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ও ফাইল ডিলিট করুন।
|
|
অযাচিত Pop-up বিজ্ঞাপন
|
কিছু ফ্রি অ্যাপ বা গেমের মধ্যে বিজ্ঞাপন দেখানো স্বাভাবিক।
|
Adware আপনার ফোনের সিস্টেমের গভীরে প্রবেশ করেছে এবং যেকোনো সময় বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে।
|
কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপ খোলার সাথে সাথেই কি বিজ্ঞাপন আসছে? নাকি হোম স্ক্রিনেও আসছে?
|
এই টেবিলটি ব্যবহার করে আপনি একজন ডাক্তারের মতো আপনার ফোনের রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। যদি দেখেন যে আপনার সমস্যার কারণগুলো 'বিপজ্জনক' কলামের সাথে মিলে যাচ্ছে, তাহলে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন।
Gathering Evidence: চোরকে হাতেনাতে ধরার পালা
লক্ষণ যেহেতু মিলে গেছে, এবার আমাদের প্রমাণ দরকার। আমরা এখন ফোনের ভেতরে ঢুকে ফরেনসিক তদন্ত চালাব এবং সেই লুকিয়ে থাকা শত্রুকে খুঁজে বের করব। ভয় পাবেন না, আমি প্রতিটি ধাপে আপনার সাথে আছি।
Step 1 – The Suspect Lineup (App লিস্ট চেক করুন)
পুলিশ যেমন সন্দেহভাজনদের এক লাইনে দাঁড় করায়, আমরাও তেমনি ফোনের সব অ্যাপকে এক লাইনে দাঁড় করাব। এই লিস্টের মধ্যেই হয়তো সেই অপরাধী লুকিয়ে আছে।
- প্রথমে আপনার ফোনের Settings-এ যান।
- এরপর Apps (বা কিছু ফোনে Apps notifications)-এ ট্যাপ করুন।
- See all apps বা App list-এ যান।
এবার আপনার সামনে ফোনের সমস্ত অ্যাপের একটি তালিকা আসবে। এখন গোয়েন্দার মতো করে এই তালিকাটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখুন। প্রতিটি অ্যাপের নাম মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করুন:
- এই অ্যাপটা কি আমি নিজে ইন্সটল করেছি? যদি কোনো অ্যাপ দেখে আপনার মনেই না পড়ে যে আপনি কবে বা কেন এটা ইন্সটল করেছেন, তাহলে সেটা একটা বড় সন্দেহভাজন।
- অ্যাপটির নাম কি সন্দেহজনক? হ্যাকাররা প্রায়ই তাদের স্পাইওয়্যারকে খুব সাধারণ বা গুরুত্বপূর্ণ নাম দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করে। যেমন: Spy, Monitor, Backup, Security, System Service, Message, Wi-Fi Service ইত্যাদি। এই ধরনের জেনেরিক নামের অ্যাপগুলো প্রায়ই ভিলেন হয়।
- অ্যাপটির আইকন কি অদ্ভুত? অনেক সময় ম্যালওয়্যারের কোনো আইকনই থাকে না, অথবা দেখতে একদম সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড আইকনের মতো হয়, যাতে আপনার চোখ এড়িয়ে যায়।
যদি এমন কোনো অ্যাপ খুঁজে পান যা আপনার কাছে ১০০% সন্দেহজনক মনে হচ্ছে, তাহলে এখনই কিছু করবেন না। শুধু নামটা মনে রাখুন বা কোথাও লিখে রাখুন। আমরা পরের ধাপে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
Step 2 – The Interrogation Room (Permission Manager-কে প্রশ্ন করুন)
এটা হলো আমাদের তদন্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। Permission Manager হলো সেই জায়গা যেখানে আপনি প্রত্যেক অ্যাপকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জেরা করবেন। আপনি জানতে পারবেন, কোন অ্যাপকে আপনি আপনার ফোনের কোন কোন ক্ষমতার চাবি দিয়ে রেখেছেন।
- আপনার ফোনের Settings-এ যান।
- Security Privacy (বা কিছু ফোনে শুধু Privacy)-তে যান।
- Permission Manager বা Permission Controller খুঁজে বের করে তাতে ট্যাপ করুন।
এখানে আপনি Camera, Microphone, Location, Contacts, SMS, Files and media-এর মতো বিভিন্ন ক্যাটাগরি দেখতে পাবেন। চলুন, একে একে কয়েকটি জেরা করি।
- Camera: এই লিস্টে ক্লিক করুন। দেখুন কোন কোন অ্যাপ আপনার ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে রেখেছে। Facebook, Instagram, WhatsApp-এর মতো অ্যাপের ক্যামেরা অ্যাক্সেস থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু একটা Calculator অ্যাপ বা একটা Music Player অ্যাপের কেন আপনার ক্যামেরা লাগবে? সে কি আপনার অজান্তে আপনার ছবি তুলছে?
- Microphone: এবার মাইক্রোফোনের লিস্টটা দেখুন। একটা Voice Recorder বা Phone অ্যাপের মাইক্রোফোন অ্যাক্সেস দরকার। কিন্তু একটা সাধারণ Photo Editor বা অফলাইন Game-এর কেন আপনার মাইক্রোফোন লাগবে? সে কি আপনার ঘরের ভেতরের কথাবার্তা শুনছে?
- Location: লোকেশন পারমিশন লিস্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। Google Maps, Uber, বা Foodpanda-র মতো অ্যাপের আপনার লোকেশন জানা দরকার। কিন্তু একটা Flashlight অ্যাপ বা Wallpaper অ্যাপের কেন জানতে হবে আপনি এখন কোথায় আছেন?
- Contacts and SMS: এই দুটো হলো সোনার খনি। একটা Calculator অ্যাপের কেন আপনার কন্টাক্ট লিস্টের অ্যাক্সেস লাগবে? বা একটা গেমের কেন আপনার SMS পড়ার অনুমতি দরকার? উত্তরটা ভয়াবহ। তারা হয়তো আপনার কন্টাক্ট লিস্ট চুরি করে অন্য কোথাও বিক্রি করছে, অথবা আপনার ব্যাংকের OTP (One-Time Password) মেসেজগুলো পড়ার চেষ্টা করছে।
আপনার করণীয়:
এই লিস্টগুলো দেখার সময় যদি আপনার বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়, তাহলে কোনো দয়া দেখাবেন না। সাথে সাথে সেই অ্যাপের পারমিশন কেড়ে নিন! অ্যাপটির নামের ওপর ট্যাপ করুন এবং Don't allow বা Deny সিলেক্ট করুন। যদি পারমিশন কেড়ে নেওয়ার পর অ্যাপটি ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে বুঝবেন যে ওই পারমিশনের পেছনেই তার আসল অসৎ উদ্দেশ্য লুকিয়ে ছিল।
Step 3 – Following the Money Trail (Data Usage চেক করুন)
চোর চুরি করে পালানোর সময় যেমন রাস্তায় চিহ্ন ফেলে যায়, তেমনি ডেটা চোর স্পাইওয়্যারও ডেটা ব্যবহারের একটা চিহ্ন রেখে যায়। আমরা এখন সেই চিহ্ন অনুসরণ করব।
- Settings-এ যান।
- Network internet বা Connections-এ যান।
- Mobile network বা Data usage-এ ট্যাপ করুন।
- App data usage বা সমতুল্য কোনো অপশন খুঁজে বের করুন।
এখানে আপনি দেখতে পাবেন, আপনার মোবাইল ডেটা ব্যবহার করে কোন অ্যাপটি সবচেয়ে বেশি ডেটা খরচ করেছে। YouTube, Facebook, Instagram, TikTok-এর মতো অ্যাপগুলো বেশি ডেটা ব্যবহার করলে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি দেখেন, এমন কোনো অচেনা বা সন্দেহজনক অ্যাপ (যেটাকে আপনি আগের ধাপে শনাক্ত করেছেন) শত শত MB বা এমনকি GB ডেটা ব্যবহার করছে, তাহলে আপনি চোরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছেন! এই ডেটা আর কিছুই নয়, আপনার ফোন থেকে চুরি করা তথ্য যা হ্যাকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
Step 4 – Checking for Wiretaps (Call Forwarding চেক করুন)
পুরোনো দিনের সিনেমার মতো, আপনার ফোনেও আড়ি পাতা হতে পারে। হ্যাকাররা আপনার কল, মেসেজ বা ডেটা অন্য কোনো নম্বরে পাঠিয়ে দিতে পারে, যাকে বলে Call Forwarding। এটা চেক করা খুব সহজ।
- আপনার ফোনের ডায়াল প্যাড (যেখান থেকে নম্বর ডায়াল করেন) খুলুন।
- প্রথমে ডায়াল করুন *#21# এবং কল বাটন চাপুন।
- এই কোডটি আপনাকে দেখাবে আপনার ভয়েস কল, ডেটা, বা SMS কোনো শর্ত ছাড়াই (Unconditionally) অন্য কোনো নম্বরে ফরওয়ার্ড করা হচ্ছে কিনা।
স্বাভাবিক ফলাফল দেখতে কেমন হবে?
স্ক্রিনে একটি পপ-আপ মেসেজ আসবে যেখানে লেখা থাকবে: Voice: Not forwarded, Data: Not forwarded, SMS: Not forwarded ইত্যাদি। যদি এমনটা দেখেন, তাহলে আপনি নিরাপদ।
- এবার ডায়াল করুন *#62# এবং কল বাটন চাপুন।
- এই কোডটি আপনাকে দেখাবে যখন আপনার ফোন বন্ধ বা নেটওয়ার্কের বাইরে থাকে (Unreachable), তখন আপনার কলগুলো কোন নম্বরে ফরওয়ার্ড করা হচ্ছে।
স্বাভাবিক ফলাফল দেখতে কেমন হবে?
সাধারণত, এখানে আপনি আপনার মোবাইল অপারেটরের (Grameenphone, Robi, Banglalink) ভয়েসমেইল সার্ভিসের একটি নম্বর দেখতে পাবেন। এটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং চিন্তার কিছু নেই।
বিপজ্জনক সিগন্যাল কোনটি?
যদি উপরের কোনো একটি কোড ডায়াল করার পর আপনি এমন কোনো ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দেখতে পান যা আপনার পরিচিত নয়, তাহলে এটা একটা মারাত্মক সতর্ক সংকেত। এর মানে হলো, আপনার কল বা মেসেজ গোপনে অন্য কেউ পেয়ে যাচ্ছে।
সর্বক্ষণিক সমাধান
যদি কোনো অচেনা নম্বর দেখতে পান, তাহলে এক মুহূর্ত দেরি না করে আপনার ডায়াল প্যাডে গিয়ে ##002# ডায়াল করুন। এই কোডটি আপনার ফোন থেকে সব ধরনের কল ফরওয়ার্ডিং ডি-অ্যাক্টিভেট বা বন্ধ করে দেবে এবং আপনার ফোনের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে ফিরিয়ে আনবে।
এই চারটি ধাপ শেষ করার পর আপনার হাতে এখন যথেষ্ট প্রমাণ থাকার কথা। আপনি এখন জানেন আপনার ফোনে কোনো শত্রু লুকিয়ে আছে কিনা। এবার সময় পাল্টা আক্রমণের।
The Counter-Attack: আপনার ডিজিটাল দুর্গ পুনরুদ্ধার
প্রমাণ যেহেতু হাতে, এখন আর বসে থাকার সময় নেই। এবার অ্যাকশনের পালা। আমরা আমাদের ডিজিটাল দুর্গ থেকে শত্রুকে বিতাড়িত করে এর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করব। আমাদের হাতে দুটি অস্ত্র আছে: একটি হলো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, আর অন্যটি হলো নিউক্লিয়ার অপশন।
Solution 1 – The Surgical Strikes (The Easy Fixes)
যদি শত্রু চিহ্নিত হয়ে যায়, তাহলে আমরা প্রথমে কিছু সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেব, যেগুলো অনেকটা টার্গেট করে চালানো সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো।
Evict the Tenant (Uninstall করুন)
আপনি তদন্তের সময় যে সন্দেহজনক অ্যাপগুলোকে খুঁজে পেয়েছেন, তাদের আর এক মুহূর্তও আপনার ফোনে থাকতে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। এদেরকে আপনার ফোন থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিন।
- Settings Apps See all apps-এ যান।
- সন্দেহজনক অ্যাপটির ওপর ট্যাপ করুন।
- Uninstall বাটনে ক্লিক করে অ্যাপটিকে বিদায় জানান।
যদি অ্যাপ Uninstall না হয়?
কিছু ধুরন্ধর ম্যালওয়্যার নিজেকে 'Device Administrator' হিসেবে রেজিস্টার করে নেয়, যার ফলে আপনি সহজে তাকে আনইন্সটল করতে পারেন না। Uninstall বাটনটি তখন নিষ্ক্রিয় (greyed out) হয়ে থাকে। এমনটা হলে:
- Settings Security Privacy More security settings (বা শুধু Security)-তে যান।
- Device admin apps (বা Phone administrators) অপশনটি খুঁজে বের করুন।
- এখানে দেখুন আপনার সন্দেহভাজন অ্যাপটি লিস্টে আছে কিনা এবং তার পাশে টিক চিহ্ন দেওয়া আছে কিনা।
- যদি থাকে, তাহলে সেটার ওপর ট্যাপ করে Deactivate করুন।
- এবার আবার অ্যাপ লিস্টে ফিরে যান, দেখবেন Uninstall বাটনটি কাজ করছে। এবার অ্যাপটিকে ডিলিট করে দিন।
Call in the Cavalry (Security Scan চালান)
আপনি হয়তো নিজের চেষ্টায় একজন শত্রুকে খুঁজে বের করেছেন, কিন্তু এমনও হতে পারে যে আরও শত্রু লুকিয়ে আছে যা আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে। তাই এবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়ার পালা। Google Play Store থেকে একটি বিশ্বস্ত এবং নামকরা Antivirus বা Antimalware অ্যাপ ইন্সটল করে পুরো ফোনটা একবার স্ক্যান করিয়ে নিন।
কোন অ্যাপ ব্যবহার করবেন?
- Malwarebytes: ম্যালওয়্যার এবং স্পাইওয়্যার খুঁজে বের করার জন্য এটি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
- Bitdefender Antivirus: এটি একটি শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস।
- Sophos Intercept X for Mobile: এটিও একটি চমৎকার এবং বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য সিকিউরিটি অ্যাপ।
মনে রাখবেন, শুধুমাত্র Google Play Store-এর মতো বিশ্বস্ত সোর্স থেকেই এই অ্যাপগুলো ইন্সটল করবেন। অ্যাপটি ইন্সটল করার পর Full Scan বা Deep Scan অপশনটি চালিয়ে দিন এবং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। অ্যাপটি যদি কোনো হুমকি খুঁজে পায়, তাহলে তার নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলোকে ফোন থেকে রিমুভ করে দিন।
Change the Locks (Password বদলে ফেলুন)
ভাবুন তো, আপনার বাড়িতে একজন চোর ঢুকেছিল। আপনি তাকে বের করে দিয়েছেন। এরপর আপনার প্রথম কাজ কী হবে? অবশ্যই বাড়ির সব তালার চাবি বদলে ফেলা! কারণ, চোর হয়তো আপনার চাবির একটি কপি বানিয়ে নিয়ে গেছে।
ডিজিটাল জগতেও নিয়মটা একই। আপনার ফোন হ্যাকড হওয়ার মানে হলো, হ্যাকার হয়তো আপনার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড জেনে গেছে। তাই, ফোন পরিষ্কার করার সাথে সাথেই আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।
- Google Account: এটা সবচেয়ে জরুরি। কারণ আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়েই পুরো অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি চলে।
- Social Media: Facebook, Instagram, Twitter/X ইত্যাদির পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন।
- Banking Apps: আপনার মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন: bKash, Nagad) এবং অন্যান্য ব্যাংকের অ্যাপের পিন বা পাসওয়ার্ড অবশ্যই পরিবর্তন করুন।
- E-commerce and other accounts: অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডও বদলে ফেলা বুদ্ধিমানের কাজ।
পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার সময় একটি শক্তিশালী এবং ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। আর দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য একটি Password Manager (যেমন Bitwarden বা Google Password Manager) ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন।
Solution 2 – The Nuclear Option (The Ultimate Fix: Factory Reset)
যদি উপরের কোনো কিছুতেই কাজ না হয়, অথবা আপনার মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থেকে যায় যে শত্রু এখনও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, তাহলে শেষ এবং সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রটি করার সময় এসেছে। এটি হলো Factory Reset—আমাদের পারমাণবিক বোমা।
সতর্কবার্তা: Factory Reset আপনার ফোনের ভেতরের সবকিছু—আপনার ছবি, ভিডিও, কন্টাক্ট নম্বর, মেসেজ, অ্যাপস, সব—চিরতরে মুছে ফেলবে। ফোনটি ঠিক সেই অবস্থায় ফিরে যাবে, যেদিন আপনি এটিকে প্রথম বক্স থেকে বের করেছিলেন। তাই এই কাজটি করার আগে অবশ্যই, অবশ্যই এবং অবশ্যই আপনার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ডেটার ব্যাকআপ নিয়ে নিতে হবে।
The Go-Bag Checklist (Backup First!)
Factory Reset করার আগে আপনার একটি 'ডিজিটাল গো-ব্যাগ' বা 'সারভাইভাল কিট' তৈরি করতে হবে, যেখানে আপনার সব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখবেন।
- Photos Videos: আপনার সমস্ত ছবি এবং ভিডিও Google Photos-এ ব্যাকআপ নিন। এটি বিনামূল্যে 15 GB স্টোরেজ দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব মিডিয়া ক্লাউডে সেভ করে রাখে।
- Contacts: আপনার কন্টাক্ট নম্বরগুলো Google Contacts-এ সেভ করা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। Settings Google Backup-এ গিয়ে Contacts অপশনটি Sync করে নিন।
- WhatsApp Chats: WhatsApp খুলে Settings Chats Chat backup-এ যান এবং Google Drive-এ আপনার সমস্ত চ্যাটের একটি ব্যাকআপ নিয়ে নিন।
- Files Documents: আপনার ফোনের File Manager-এ থাকা জরুরি ফাইল, PDF বা ডকুমেন্টগুলো Google Drive, Dropbox বা অন্য কোনো ক্লাউড স্টোরেজে আপলোড করে রাখুন।
- SMS Messages: আপনার যদি গুরুত্বপূর্ণ SMS সেভ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে Play Store থেকে "SMS Backup Restore"-এর মতো কোনো অ্যাপ ব্যবহার করে সেগুলোর ব্যাকআপ নিতে পারেন।
The Final Step (Erase All Data)
ব্যাকআপ নেওয়া হয়ে গেলে এবং আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত হলে, এবার চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিন।
- Settings-এ যান।
- System-এ ট্যাপ করুন।
- Reset options-এ যান।
- Erase all data (factory reset)-এ ট্যাপ করুন।
- ফোনটি আপনার কাছে শেষবারের মতো নিশ্চিতকরণ চাইবে। আপনার ফোনের পিন বা পাসওয়ার্ড দিয়ে প্রক্রিয়াটি শুরু করুন।
ফোনটি রিস্টার্ট হবে এবং রিসেট প্রক্রিয়া শুরু হতে কয়েক মিনিট সময় লাগবে। এরপর যখন ফোনটি আবার চালু হবে, তখন এটি হবে একটি সম্পূর্ণ নতুন, পরিষ্কার এবং সুরক্ষিত ডিভাইস। কোনো ভাইরাস, স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যারের অস্তিত্ব আর থাকবে না। এবার আপনি আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করে ব্যাকআপ থেকে আপনার ডেটা রিস্টোর করতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াটি হয়তো একটু ঝামেলার, কিন্তু এটি আপনাকে সম্পূর্ণ মানসিক শান্তি দেবে।
শেষকথা: ভবিষ্যতের জন্য ডিজিটাল বর্ম তৈরি করুন
অভিনন্দন! আপনি শুধু একটি টেকনিক্যাল সমস্যার সমাধান করেননি, আপনি একটি যুদ্ধ জয় করেছেন। আপনি ভয়কে জয় করে গোয়েন্দা হয়েছেন, প্রমাণ খুঁজেছেন, শত্রুকে চিহ্নিত করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত নিজের ডিজিটাল দুর্গ পুনরুদ্ধার করেছেন। এই পুরো যাত্রায় আপনি আপনার ফোন সম্পর্কে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে যা শিখেছেন, সেটাই আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন। এখন আপনার কাজ হলো, এই দুর্গটিকে ভবিষ্যতের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য একটি দুর্ভেদ্য বর্ম তৈরি করা। কারণ, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
একবার ফোন পরিষ্কার করার মানে এই নয় যে আপনি আজীবনের জন্য সুরক্ষিত। সাইবার জগতের অপরাধীরা সবসময় নতুন নতুন ফাঁদ তৈরি করছে। তাই আপনাকেও সবসময় সচেতন থাকতে হবে। আপনার আজকের অর্জিত জ্ঞানকে একটি অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। এটিকে আপনার 'সাইবার সিকিউরিটি কোড অফ কন্ডাক্ট' বা ডিজিটাল জীবনযাপনের নিয়মাবলী হিসেবে গ্রহণ করুন।
প্রথমত, আপনার ফোনের দারোয়ান হয়ে উঠুন। কোনো অচেনা বা अविश्वস্ত ওয়েবসাইট থেকে APK ফাইল ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন। Google Play Store হলো একটি সুরক্ষিত দুর্গ, আর বাইরের সোর্স থেকে APK ডাউনলোড করা মানে হলো সেই দুর্গের পেছনের দরজা দিয়ে একজন অচেনা আগন্তুককে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, অ্যাপ ইন্সটল করার আগে তার শর্তাবলী পড়ুন। আমরা সবাই কোনো অ্যাপ ইন্সটল করার সময় না পড়েই Allow, Allow, Allow করে যাই। এই অভ্যাসটি বদলাতে হবে। একটি অ্যাপ কী কী পারমিশন চাইছে, তা মনোযোগ দিয়ে দেখুন। একটি টর্চলাইট অ্যাপের আপনার কন্টাক্ট লিস্টে কোনো কাজ নেই। পারমিশন চাওয়ার ধরণ দেখেই অ্যাপটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেক কিছু বোঝা যায়।
তৃতীয়ত, পাবলিক ফাঁদ এড়িয়ে চলুন। ফ্রি পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার করাটা খুব লোভনীয় হতে পারে, কিন্তু এটা অনেকটা একটা পাবলিক স্কয়ারে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে আপনার ব্যাংকের পাসওয়ার্ড বলার মতো। পাবলিক Wi-Fi নেটওয়ার্কগুলো প্রায়ই অসুরক্ষিত থাকে এবং হ্যাকাররা সহজেই আপনার ডেটা চুরি করতে পারে। তাই, পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার করার সময় ব্যাংকিং বা অন্য কোনো সংবেদনশীল কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। একান্ত প্রয়োজনে VPN (Virtual Private Network) ব্যবহার করুন।
এবং সবশেষে, আপনার ডিজিটাল দেহরক্ষী নিয়োগ করুন। Two-Factor Authentication (2FA) হলো আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য একজন ব্যক্তিগত দেহরক্ষী। পাসওয়ার্ড হলো আপনার বাড়ির চাবি। কিন্তু 2FA চালু থাকলে, কেউ সেই চাবি চুরি করলেও বাড়িতে ঢুকতে পারবে না, কারণ দরজায় দাঁড়ানো দেহরক্ষী (আপনার ফোন) তাকে আটকে দেবে। আপনার গুগল, ফেসবুক এবং সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে আজই 2FA চালু করুন।
আজ আপনি যা শিখলেন, তা শুধু আপনার ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য নয়। এই জ্ঞান আপনার বন্ধু, আপনার পরিবার, আপনার প্রিয়জনদেরও সুরক্ষিত রাখতে পারে। তাই, আমাদের ব্লগের মূলমন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিন: নিজে জানুন, এবং অবশ্যই অন্যকে জানান। আপনার ফোন আপনার সম্পদ, আর এর সবচেয়ে বড় রক্ষকও আপনি নিজেই।
কল টু অ্যাকশন (Call to Action)
এই পোস্টটা কি আপনার একটুও কাজে এসেছে? আপনার ফোনের সিকিউরিটি চেক-আপ করে কি কোনো সন্দেহজনক কিছু খুঁজে পেয়েছেন? কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করুন। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, বা কোনো ধাপে আটকে যান, নির্দ্বিধায় জিজ্ঞাসা করুন! আমাদের কমিউনিটি আপনাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো, এই পোস্টটি আপনার WhatsApp গ্রুপে বা Facebook ওয়ালে শেয়ার করে আপনার প্রিয়জনদেরও ডিজিটালভাবে সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করুন। মনে রাখবেন, সাইবার নিরাপত্তায় আমরা একা একা দুর্বল, কিন্তু একসাথেই শক্তিশালী।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
প্রশ্ন ১: Factory reset করার পরেও কি আমার ফোন আবার হ্যাক হতে পারে?
- উত্তর: হ্যাঁ, পারে। Factory reset আপনার ফোনকে সফটওয়্যারের দিক থেকে একদম পরিষ্কার করে দেয়, কিন্তু এটি আপনার অভ্যাসকে পরিবর্তন করে না। আপনি যদি রিসেট করার পর আবার সেই একই अविश्वস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করেন, বিপজ্জনক লিঙ্কে ক্লিক করেন, বা দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ফোন আবার হ্যাক হতে পারে। মনে রাখবেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা একটি এককালীন কাজ নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন ২: আইফোন কি এই ধরনের হ্যাকিং থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ?
- উত্তর: যদিও Apple-এর "walled garden" ইকোসিস্টেমের কারণে আইফোনকে সাধারণত অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত বলে মনে করা হয়, তবে কোনো ডিভাইস-ই ১০০% হ্যাক-প্রুফ নয়। অত্যাধুনিক এবং টার্গেটেড স্পাইওয়্যার (যেমন পেগাসাস) আইফোনকেও আক্রমণ করতে পারে। বিশেষ করে যদি ফোনটি "jailbroken" করা হয় বা ব্যবহারকারী কোনো অত্যাধুনিক ফিশিং অ্যাটাকের শিকার হন। তাই আইফোন ব্যবহারকারীদেরও সতর্ক থাকা উচিত।
প্রশ্ন ৩: পেইড অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ কি ফ্রী-গুলোর চেয়ে আসলেই ভালো?
- উত্তর: অনেক ক্ষেত্রে, হ্যাঁ। পেইড অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপগুলো সাধারণত কিছু অতিরিক্ত এবং উন্নত ফিচার প্রদান করে, যেমন: রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন (যা সব সময় আপনার ফোনকে পাহারা দেয়), অ্যান্টি-ফিশিং সুরক্ষা, ওয়েব প্রোটেকশন এবং উন্নত কাস্টমার সাপোর্ট। তবে, একটি সাধারণ স্ক্যানের জন্য Malwarebytes বা Sophos-এর মতো নামকরা ফ্রী অ্যাপগুলোও চমৎকার কাজ করে এবং কোনো সুরক্ষা না থাকার চেয়ে অনেক অনেক ভালো।
প্রশ্ন ৪: আমি কীভাবে বুঝব যে একটি ওয়েবসাইট APK ডাউনলোডের জন্য নিরাপদ?
- উত্তর: সবচেয়ে নিরাপদ নিয়ম হলো: APK ডাউনলোড করবেন না। যদি না আপনি একজন বিশেষজ্ঞ হন এবং সোর্সটিকে (যেমন অ্যাপটির ডেভেলপারের নিজস্ব অফিসিয়াল ওয়েবসাইট) সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন। ৯৯% ক্ষেত্রে, অজানা ওয়েবসাইট থেকে APK ডাউনলোড করা মানেই ম্যালওয়্যারকে আমন্ত্রণ জানানো। আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপটি খোঁজার জন্য সবসময় প্রথমে Google Play Store-এ যান।
প্রশ্ন ৫: Two-Factor Authentication (2FA) কী এবং এটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
- উত্তর: 2FA আপনার অ্যাকাউন্টে একটি দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা যোগ করে। এর মানে হলো, লগইন করার জন্য শুধু আপনার পাসওয়ার্ড (প্রথম ফ্যাক্টর) দিলেই হবে না, সাথে আরও একটি প্রমাণ দিতে হবে। এই দ্বিতীয় প্রমাণটি (দ্বিতীয় ফ্যাক্টর) সাধারণত আপনার ফোনে পাঠানো একটি কোড, বা একটি অথেন্টিকেটর অ্যাপ দ্বারা তৈরি একটি কোড হয়। এটি এত গুরুত্বপূর্ণ কারণ, কোনো হ্যাকার যদি আপনার পাসওয়ার্ড চুরিও করে ফেলে,সে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করতে পারবে না, কারণ তার কাছে আপনার ফোন বা দ্বিতীয় ফ্যাক্টরটি নেই। এটি আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি।


কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url