রিজিক আল্লাহ্র লিখিত নিয়তি নাকি মানুষের চেষ্টা? ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য উদঘাটন
রিজিক: আগে থেকে লিখিত নিয়তি
“পৃথিবীর বুকে কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হুদ: ৬)
এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, মানুষ যতই চেষ্টা করুক, রিজিকের পরিমাণ আল্লাহ্র ইলমে আগে থেকে নির্ধারিত।
হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“চারটি বিষয় প্রতিটি মানুষ জন্মের আগে লিখে দেওয়া হয়: তার রিজিক, তার আয়ুষ্কাল, তার আমল এবং সে সুখী নাকি দুঃখী।” (বুখারি ও মুসলিম)
রিজিক নির্দিষ্ট, তবে পথ আমাদের হাতে
- 
আপনি যদি হালাল উপায়ে পরিশ্রম করেন, ধৈর্য ধরেন, দোয়া করেন—তাহলে এই ১ কোটি টাকা হালাল পথে আসবে।
- 
আবার যদি শর্টকাট খুঁজেন, প্রতারণা করেন, সুদ বা ঘুষ নেন—তাহলে একই ১ কোটি টাকা আসবে, তবে সেটা হবে হারাম।
রিজিকের শক্তি: কেউ কারওটা নিতে পারে না
বাস্তব উদাহরণ
আপনি ঢাকায় বসে একটি আপেল খেলেন। অথচ সেটা এসেছে ইতালি থেকে।
- 
গাছে যখন ফুল এসেছিল, তখন থেকেই আল্লাহ্র হিকমতে নির্ধারিত হয়েছিল যে ফলটি আপনার কাছে পৌঁছাবে।
- 
হয়তো অনেক ক্রেতা সেটি দোকানে দেখে কিনলো না।
- 
হয়তো অনেক সময় ফলটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
- 
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আপনার হাতে এলো, কারণ সেটা আপনার রিজিক।
রিজিক পৌঁছে দেয়ার মাধ্যম
হালাল রিজিকের গুরুত্ব
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“হালাল উপার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ।” (তাবারানী)
হালাল রিজিকের উপকারিতা
- 
জীবনে সন্তুষ্টি আসে। 
- 
দোয়া কবুল হয়। 
- 
সন্তান-সন্ততির মধ্যে নেকী আসে। 
- 
বরকত ও শান্তি নেমে আসে। 
হারাম রিজিকের ক্ষতি
অন্যদিকে হারাম উপার্জনের ক্ষতি ভয়াবহ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যে দেহ হারাম খাদ্যে লালিত-পালিত হয়, জাহান্নামই তার উপযুক্ত।” (মুসনাদ আহমাদ)
হারাম রিজিকের পরিণতি
- 
দোয়া কবুল হয় না। 
- 
ইবাদতে মনোযোগ আসে না। 
- 
সন্তানের মধ্যে অবাধ্যতা আসে। 
- 
জীবনে অশান্তি বিরাজ করে। 
রিজিকের জন্য তাওয়াক্কাল
কেউ যদি ভাবে—“রিজিক তো লিখিত, তাহলে চেষ্টা করবো কেন?”
এই ধারণা ভুল।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যদি তোমরা আল্লাহ্র উপর প্রকৃত ভরসা করতে, তাহলে যেমনভাবে পাখিরা সকালে খালি পেটে বের হয় আর সন্ধ্যায় ভরে ফিরে আসে, আল্লাহ্ তোমাদেরকেও তেমন রিজিক দিতেন।” (তিরমিজি)
👉 এখানে শিক্ষা হলো: চেষ্টা করা বাধ্যতামূলক, কিন্তু ফল আল্লাহ্র হাতে।
দান-সদকা ও রিজিক বৃদ্ধি
ইসলামে দান-সদকাকে রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম উপায় বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“সদকা সম্পদ কমায় না।” (মুসলিম)
বরং দান করলে রিজিকের বরকত বেড়ে যায় এবং অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে নতুন রিজিক আসে।
রিজিক নিয়ে ভয়-দুশ্চিন্তা না করা
আজকের যুগে আমরা রিজিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করি। কিন্তু ইসলাম আমাদের সান্ত্বনা দেয়:
“যে আল্লাহ্কে ভয় করে, তার জন্য আল্লাহ্ এমন রাস্তা করে দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। এবং তাকে এমন রিজিক দেন যা সে ধারণাও করে না।” (সূরা তালাক: ২-৩)
আমাদের করণীয়
১. রিজিকের জন্য অবৈধ পথে না যাওয়া।
২. আল্লাহ্র উপর পূর্ণ ভরসা রাখা।
৩. হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা।
৪. দান-সদকা করা।
৫. দোয়া করা:
“হে আল্লাহ্! আমাকে হালাল রিজিক দান করুন এবং হারাম থেকে বাঁচান।”
শেষকথা
👉 পাঠকের প্রতি বার্তা (CTA):


 
 
 
 
 
কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url