OrdinaryITPostAd

রিজিক আল্লাহ্‌র লিখিত নিয়তি নাকি মানুষের চেষ্টা? ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য উদঘাটন

আমরা প্রতিদিন জীবন নিয়ে নানা প্রশ্ন করি—আমার জীবনে কত টাকা আসবে? কে হবে আমার জীবনসঙ্গী? কবে কোথায় আমার মৃত্যু হবে? আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসলাম আমাদের শেখায়—এসব সবকিছুই আল্লাহ্‌ তায়ালার ইলমে আগে থেকেই নির্ধারিত। এমনকি আমরা জীবনে কতগুলো ভাতের দানা খাবো, সেটাও লিখিত। কিন্তু এখানে এক প্রশ্ন আসে—তাহলে আমাদের চেষ্টা কোথায়? হালাল-হারাম পার্থক্য কেন? এই ব্লগে আমরা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে রিজিকের রহস্য, আমাদের দায়িত্ব, এবং বাস্তব জীবনের শিক্ষাগুলো আলোচনা করবো।
Is sustenance Allah's written destiny or human effort
মানুষ সারাজীবন রিজিকের পিছনে দৌড়ায়। টাকা, মান-সম্মান, ভালো খাবার, সুন্দর জীবনসঙ্গী—এসবই আমাদের চাওয়ার তালিকায় থাকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসলাম আমাদের শেখায়—এসব কিছুই আল্লাহ্‌র ইলমে আগে থেকে নির্ধারিত। জন্মের আগে ফেরেশতারা আমাদের রিজিক, আয়ুষ্কাল, আমল এবং সুখ-দুঃখ লিখে দেন। তবুও প্রশ্ন জাগে—তাহলে চেষ্টা কেন? হালাল-হারামের পার্থক্য কেন? এই ব্লগে আমরা কোরআন-হাদীস, বাস্তব উদাহরণ ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে রিজিকের গভীর রহস্য উন্মোচন করবো।

রিজিক: আগে থেকে লিখিত নিয়তি

আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরআনে ঘোষণা করেছেন:

“পৃথিবীর বুকে কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হুদ: ৬)

এই আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, মানুষ যতই চেষ্টা করুক, রিজিকের পরিমাণ আল্লাহ্‌র ইলমে আগে থেকে নির্ধারিত।

হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“চারটি বিষয় প্রতিটি মানুষ জন্মের আগে লিখে দেওয়া হয়: তার রিজিক, তার আয়ুষ্কাল, তার আমল এবং সে সুখী নাকি দুঃখী।” (বুখারি ও মুসলিম)
অর্থাৎ আমাদের জীবনের রিজিক এক বিন্দুও এদিক-ওদিক হয় না।

রিজিক নির্দিষ্ট, তবে পথ আমাদের হাতে

ধরুন, আল্লাহ্‌ লিখে দিয়েছেন যে আপনি জীবনে ১ কোটি টাকা আয় করবেন।
  • আপনি যদি হালাল উপায়ে পরিশ্রম করেন, ধৈর্য ধরেন, দোয়া করেন—তাহলে এই ১ কোটি টাকা হালাল পথে আসবে।
  • আবার যদি শর্টকাট খুঁজেন, প্রতারণা করেন, সুদ বা ঘুষ নেন—তাহলে একই ১ কোটি টাকা আসবে, তবে সেটা হবে হারাম।
👉 মূল শিক্ষা হলো: রিজিক বাড়ে না, কমেও না। কিন্তু হালাল বা হারামের মাধ্যমে তার রঙ পাল্টে যায়।

রিজিকের শক্তি: কেউ কারওটা নিতে পারে না

আমরা প্রায়ই চিন্তায় ভুগি—অমুক আমার রিজিক কেড়ে নিলো, অথবা আমার ভাগ্য নষ্ট হলো। কিন্তু ইসলাম স্পষ্টভাবে বলে—কেউ কারও রিজিক খেতে পারে না।

বাস্তব উদাহরণ

আপনি ঢাকায় বসে একটি আপেল খেলেন। অথচ সেটা এসেছে ইতালি থেকে।

  • গাছে যখন ফুল এসেছিল, তখন থেকেই আল্লাহ্‌র হিকমতে নির্ধারিত হয়েছিল যে ফলটি আপনার কাছে পৌঁছাবে।
  • হয়তো অনেক ক্রেতা সেটি দোকানে দেখে কিনলো না।
  • হয়তো অনেক সময় ফলটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
  • কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি আপনার হাতে এলো, কারণ সেটা আপনার রিজিক।

রিজিক পৌঁছে দেয়ার মাধ্যম

আমাদের আত্মীয়, বন্ধু বা অতিথি যখন আমাদের বাড়িতে খায়, তখন আসলে সে আমাদের খাবার খাচ্ছে না। বরং আল্লাহ্‌ তার রিজিক আমাদের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছেন। আমরা কেবল মাধ্যম। এভাবেই পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের রিজিক সঠিক ঠিকানায় পৌঁছায়।

হালাল রিজিকের গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“হালাল উপার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরজ।” (তাবারানী)

হালাল রিজিক শুধু শরীরকে নয়, আত্মাকেও প্রশান্তি দেয়। হালাল রিজিকের মধ্যে বরকত থাকে।

হালাল রিজিকের উপকারিতা

  1. জীবনে সন্তুষ্টি আসে।

  2. দোয়া কবুল হয়।

  3. সন্তান-সন্ততির মধ্যে নেকী আসে।

  4. বরকত ও শান্তি নেমে আসে।


হারাম রিজিকের ক্ষতি

অন্যদিকে হারাম উপার্জনের ক্ষতি ভয়াবহ।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“যে দেহ হারাম খাদ্যে লালিত-পালিত হয়, জাহান্নামই তার উপযুক্ত।” (মুসনাদ আহমাদ)

হারাম রিজিকের পরিণতি

  1. দোয়া কবুল হয় না।

  2. ইবাদতে মনোযোগ আসে না।

  3. সন্তানের মধ্যে অবাধ্যতা আসে।

  4. জীবনে অশান্তি বিরাজ করে।


রিজিকের জন্য তাওয়াক্কাল

কেউ যদি ভাবে—“রিজিক তো লিখিত, তাহলে চেষ্টা করবো কেন?”
এই ধারণা ভুল।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“যদি তোমরা আল্লাহ্‌র উপর প্রকৃত ভরসা করতে, তাহলে যেমনভাবে পাখিরা সকালে খালি পেটে বের হয় আর সন্ধ্যায় ভরে ফিরে আসে, আল্লাহ্‌ তোমাদেরকেও তেমন রিজিক দিতেন।” (তিরমিজি)

👉 এখানে শিক্ষা হলো: চেষ্টা করা বাধ্যতামূলক, কিন্তু ফল আল্লাহ্‌র হাতে।


দান-সদকা ও রিজিক বৃদ্ধি

ইসলামে দান-সদকাকে রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম উপায় বলা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“সদকা সম্পদ কমায় না।” (মুসলিম)

বরং দান করলে রিজিকের বরকত বেড়ে যায় এবং অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে নতুন রিজিক আসে।


রিজিক নিয়ে ভয়-দুশ্চিন্তা না করা

আজকের যুগে আমরা রিজিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করি। কিন্তু ইসলাম আমাদের সান্ত্বনা দেয়:

“যে আল্লাহ্‌কে ভয় করে, তার জন্য আল্লাহ্‌ এমন রাস্তা করে দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। এবং তাকে এমন রিজিক দেন যা সে ধারণাও করে না।” (সূরা তালাক: ২-৩)

আমাদের করণীয়

১. রিজিকের জন্য অবৈধ পথে না যাওয়া।
২. আল্লাহ্‌র উপর পূর্ণ ভরসা রাখা।
৩. হালাল উপার্জনের চেষ্টা করা।
৪. দান-সদকা করা।
৫. দোয়া করা:

“হে আল্লাহ্‌! আমাকে হালাল রিজিক দান করুন এবং হারাম থেকে বাঁচান।”


শেষকথা

রিজিক হলো আল্লাহ্‌র আগে থেকে নির্ধারিত একটি মহান সত্য। কেউ কারও রিজিক খেতে পারে না। তবে আমরা হালাল বা হারাম পথে তা অর্জন করি সেটাই আমাদের আসল পরীক্ষা। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে হালাল রিজিক অর্জনের তাওফিক দান করুন এবং হারাম থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

👉 পাঠকের প্রতি বার্তা (CTA):

রিজিক নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন? হালাল-হারাম উপার্জন নিয়ে আপনার চিন্তা কী? কমেন্টে শেয়ার করুন, আর পোস্টটি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন যেন সবাই আল্লাহ্‌র রহমতের এই দিকটি বুঝতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কাজীআরিফুল ডট কমে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url